লেখক, মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন:
গৌরব আর অর্জনে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের ষষ্ঠ বৃহত্তম স্কাউট দেশ। তবে বিশ্বব্যাপী সমাদৃত এই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের যাত্রা শুরু অনেক আগে। ১৯০৭ সালে রবার্ট স্টিভেন্সন স্মিথ লর্ড ব্যাডেন পাওয়েল অব গিলওয়েল এই খুব আন্দোলনের প্রতিষ্ঠা করেন।
ব্যাডেন পাওয়েল এর পরিচিতি: স্কাউট আন্দোলন এর প্রবর্তক রবার্ট স্টিফেনসন স্মিথ লর্ড ব্যাডেন পাওয়েল অব গিলওয়েল (সংক্ষেপে বিপি) ১৮৫৭ সালের ২২শে ফেব্রুয়ারি লন্ডনে জন্মগ্রহণ করেন। বেডেন পাওয়েল এর বাবা ছিলেন অক্সফোর্ড এর প্রফেসর আর.এইচ জি পাওয়েল ও মা হেনরিয়েটা গেসা। মা ছিলেন ব্রিটিশ নৌ সেনাপতি ডব্লিউ, টি, স্মিথের কন্যা। স্ত্রী ওলাভ সোয়েমস। তাঁরা ছিলেন সাত ভাইবোন। বিপি ছিলেন পঞ্চম। তিনি ১৮৭০ সালে লন্ডন নগরীর চার্টার হাই স্কুলে ভর্তি হন। ১৮৭৬ সালে সেনাবাহিনীতে ভর্তি হয়ে মাত্র ২৬ বছর বয়সে তীক্ষ্ণ বুদ্ধি ও সামরিক দক্ষতার স্বীকৃতি হিসেবে ক্যাপ্টেন পদ লাভ করেন ও পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন স্তর পেরিয়ে মাত্র ৪৩ বছর বয়সে ব্রিটিশ সামরিক বাহিনীর সর্বকনিষ্ঠ মেজর জেনারেল নিযুক্ত হন। ১৯১২ সালে তিনি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। মৃত্যু ১৯৪১ সালের ০৮ জানুয়ারি কেনিয়ার নাইরোবেরিতে । বিপি ১৮৯৯ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার ক্ষুদ্র সীমান্ত শহর মাফেকিং এ যখন ২১৭ দিন বুয়রদের দ্বারা অবরুদ্ধ ছিলেন, তখন তাঁর নিজ সেনাদের বয়সী স্থানীয় বালকদের পাশাপাশি ব্যবহার করে যে সফলতা লাভ করেছিলেন, পরবর্তীতে সেই চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে স্কাউটিং বালকদের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার পদক্ষেপ নেন এবং কালক্রমে তা আন্দোলনে রূপ নেয়। মাফেকিং জয়ের পর ২০ জন বালক নিয়ে ১৯০৭ সালে ইংল্যান্ডের ব্রাউন-সী দ্বীপে বিপি যে পরীক্ষামূলক ক্যাম্প আয়োজন করেছিলেন, তারই ফলশ্রুতিতে সারা বিশ্বে এই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। ১৯০৮ সালে রোভার স্কাউটিং প্রবর্তিত। হয়। ১৯১৬ সালে কাবদের জন্য লেখা উলফ কাব হ্যান্ড বুক প্রকাশিত হয়। ১৯১৮ সালে রোভার স্কাউট প্রবর্তিত হয়। ১৯২০ সালে রোভার স্কাউটদের জন্য লেখা “রোভারিং টু সাকসেস” প্রকাশিত হয়। ১৯২৬ সালে প্রতিষ্ঠীদের স্কাউটিং শুরু হয়।
বাংলাদেশের স্কাউটিং: ১৯৭২ সালের ৯ এপ্রিল বাংলাদেশে বয় স্কাউট সমিতি গঠিত হয়। প্রথম জাতীয় কমিশনার নির্বাচিত হন পিয়ার আলী নাজির। ঐ বছরের সেপ্টেম্বর মাসে রাষ্ট্রপতির আদেশ বলে বাংলাদেশ স্কাউটকে সরকারি স্বীকৃতি দেয়া হয়। ১৯৭৪ সালে ১ জুন বিশ্ব স্কাউট সংস্থা বাংলাদেশ স্কাউটকে বিশ্ব স্কাউট সংস্থার ১০৫ নং সদস্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশ গার্ল-ইন-স্কাউটিং প্রবর্তিত হয়। বর্তমানে বাংলাদেশ স্কাউটস ১৩টি অঞ্চলে বিভক্ত। জাতীয় স্কাউট প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গাজীপুরের মৌচাকে অবস্থিত। মহামান্য রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশ স্কাউটস এর চীফ স্কাউট। আজকের তরুণ, আগামীর বাংলাদেশ। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে স্কাউটিং এর ভূমিকা অনস্বীকার্য। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মনে করেন, বাংলাদেশ আজ যতদূর এগিয়েছে, ভবিষ্যতে আজকের শিশু-কিশোর-তরুণ বাংলাদেশকে আরও সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবে। স্কাউটিং কার্যক্রমই পারে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে প্রগতিশীল, সৃজনশীল ও উন্নয়নের পথে সম্পৃক্ত করে দেশকে সোনার বাংলায় রূপান্তর করতে। বাংলাদেশে বর্তমানে স্কাউটের সংখ্যা প্রায় ২২ লাখ জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, 'আমাদের যুবসমাজকে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার জন্য লেখাপড়ার পাশাপাশি স্কাউটিংয়ে আরও বেশি সম্পৃক্ত করা প্রয়োজন। ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েদেরও স্কাউটিংয়ে সমানভাবে সম্পৃক্ত করতে হবে। মেয়েরা পিছিয়ে থাকলে দেশের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হবে। স্কাউট সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি তাদের গুণগতমানও নিশ্চিত করতে হবে। স্কাউটরা সব সময় অন্যায় কাজ থেকে বিরত থাকে। একজন মানবিক মানুষের স্বাদ পেতে হলে অন্যের বিপদে এগিয়ে যেতে হবে। তাই দেশের প্রতিটি দুর্যোগে স্কাউট ও রোভার স্কাউট সদস্যরা সেবার মন্ত্রে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ায়। বন্যায় পানিবন্দিদের উদ্ধার কাজ, অগ্নিকাণ্ডে উদ্ধার অভিযান, মানুষকে শীতবস্ত্র বিতরণসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে স্কাউটদের সাড়া দিতে দেখা যায়। শুধু দেশে নয়, প্রশিক্ষণের জন্য বিভিন্ন সময় বাংলাদেশ স্কাউটসের সদস্যরা বিভিন্ন দেশের ক্যাম্পে অংশগ্রহণ করে। যা একদিকে যেমন ছাত্রজীবনকে সমৃদ্ধ করে। একই সঙ্গে দক্ষ ও যোগ্য হয়ে উঠতে সহায়তা করে। নিজের প্রতি কর্তব্য পালন, সৃষ্টিকর্তার প্রতি কর্তব্য পালন এবং অপরের প্রতি কর্তব্য পালন এই তিন মূল মন্ত্র নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে স্কাউটরা। স্কাউটদের মূলমন্ত্র হচ্ছে কাব স্কাউট যথাসাধ্য চেষ্টা করা, স্কাউট সদা প্রস্তুত এবং রোভার স্কাউট সেবা। স্কাউটদের আত্মমর্যাদাসম্পন্ন, সৎ, চরিত্রবান, কর্মোদ্যোগী, সেবাপরায়ণ, সর্বোপরি সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে বাংলাদেশ স্কাউটস কাজ করে থাকে। বাংলাদেশের আর্থ- সামাজিক অবস্থা ও মূল্যবোধ অবক্ষয়ের প্রেক্ষাপটে দেশ ও জাতি গঠনে স্কাউট আন্দোলনের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব অপরিহার্য। মাদক, সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ, বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে গণসচেতনতা তৈরি করতে স্কাউটরা সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। স্কাউটিং নতুন প্রজন্মকে নৈতিক ও জীবনধর্মী প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্কাউটিং এর মাধ্যমে তরুণদের মাঝে আধুনিক, প্রগতিশীল ও সৃজনশীল গুণাবলি বিকশিত হয়। ফলে স্কাউট সদস্যরা সেবার মন্ত্রে দীক্ষিত হচ্ছে এবং সচেতন দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলছে। 'স্মার্ট বাংলাদেশ" পড়ার স্তম্ভ হবে চারটি। যথা: স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট গভর্নমেন্ট এবং স্মার্ট সোসাইটি। ২০৪১ সাল নাগাদ একটি সাশ্রয়ী, টেকসই, বুদ্ধিদীপ্ত, জ্ঞানভিত্তিক, উদ্ভাবনী, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়াই বর্তমান সরকারের লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে স্কাউটরা। স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নে তরুণদের উদ্বুদ্ধকরণের পাশাপাশি স্কাউটদেরকে প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণ ও গবেষণায় গুরুত্ব দিতে হবে। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে প্রয়োজন স্মার্ট জেনারেশন। সরকার প্রধান স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণে যে চারটি নির্দিষ্ট ক্ষেত্রকে চিহ্নিত করে অগ্রসর হওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন, তাতে স্পষ্টই বোঝা যায় যে দেশের এই চারটি খাতকে সম্পূর্ণ প্রযুক্তিনির্ভর স্মার্ট খাত হিসেবে গড়ে তুলতে পারলে স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তরের আর কোনো কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না। আজকের শিক্ষার্থীরা স্মার্ট জেনারেশন তথা স্মার্ট সিটিজেন তৈরির অন্যতম। মূল কারিগর। এজন্য তরুণ প্রজন্মের স্কাউটদেরকে তথ্য প্রযুক্তিতে উন্নত করার কোন বিকল্প নেই। যারা রাষ্ট্রীয় সম্পদ যেমন গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি ইত্যাদি ব্যবহারের ক্ষেত্রে মিতব্যয়ী হবে, তারাই পরিবেশ ও জীববৈচিত্র রক্ষার ক্ষেত্রে দৃঢ় প্রত্যয়ী হবে। মুখস্থ বিদ্যার ওপর নির্ভর না করে প্রচলিত শিক্ষার পাশাপাশি বিজ্ঞান ক্লাব, রোবোটিকস, স্কাউটিং, ডিবেটিংসহ বিভিন্ন ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করবে তারাই রুচিশীল ও মার্জিত আচরণের মাধ্যমে গড়ে তুলবে বাংলাদেশ। তথ্য প্রযুক্তি মাধ্যম ব্যবহারের ক্ষেত্রে স্মার্ট জেনারেশনকে হতে হবে আরও সচেতন। সকল প্রকার মাদক, সন্ত্রাস, কিশোর অপরাধ পরিহার করে গুজবের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকতে হবে। তাহলেই স্মার্ট জেনারেশনের হাত ধরেই স্মার্ট বাংলাদেশের প্রথম উপাদান স্মার্ট সিটিজেন নিশ্চিত হবে। স্কাউটিংয়ের শিক্ষা ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে কাজে লাগানো গেলে জাতীয় উন্নয়ন গতিশীল হবে। স্কাউটিং কর্মকাণ্ড নতুন প্রজন্মকে আধুনিক, গতিশীল ও সৃজনশীল নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে সহায়তা করে। স্কাউটিং সমাজকে এগিয়ে নিতে সহায়তা করে। আগামী দিনে স্কাউটরাই বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেবে। বিভিন্ন সমাজ সেবা ও উন্নয়নমূলক কাজে সক্রিয় ভূমিকা পালন করবে। বৃক্ষরোপণ, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র রক্ষা এবং বৈশ্বিক উষ্ণতার বিরুদ্ধে গণসচেতনতামূলক প্রচারণা চালানো, পাশাপাশি ঘূর্ণিঝড়, ভবন ধস ও অগ্নিকাণ্ডসহ যে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় উদ্ধার অভিযানে এগিয়ে আসে স্কাউটরা। স্মার্ট সিটি ও স্মার্ট ভিলেজ বাস্তবায়নের জন্য স্মার্ট স্বাস্থ্যসেবা, স্মার্ট ট্রান্সপোর্টেশন, স্মার্ট ইউটিলিটিজ, নগর প্রশাসন, জননিরাপত্তা, কৃষি, ইন্টারনেট কানেক্টিভিটি ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, রোবটিক্স, মাইক্রোচিপ ডিজাইনিং অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারিং ও সাইবার সিকিউরিটি এই চারটি প্রযুক্তিতে আমাদের মনোযোগী হতে হবে। স্মার্ট সিটি এমন নগরায়ণ হবে যেখানে ন্যূনতম পরিবেশগত প্রভাব নিশ্চিত করে কোনো একটি শহরের সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহারের পাশাপাশি নাগরিকদের জন্য উন্নততর জনবান্ধব সেবা প্রদানে আধুনিক প্রযুক্তিগুলোকে কাজে লাগানো হবে। স্মার্ট ভিলেজ হবে এমন এক গ্রামীণ জনগোষ্ঠী যেখানে ডিজিটাল প্রযুক্তি এবং উন্মুক্ত উদ্ভাবনী প্ল্যাটফর্মের ব্যবহারের মাধ্যমে স্থানীয় নাগরিকরা বিশ্ব বাজারে সাথে যোগাযোগের সুযোগ পাবে। এছাড়া সরকারি ও বেসরকারি উভয় খাতের বিভিন্ন সেবা প্রদান ব্যবস্থাকে উন্নত করা, খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং নবায়নযোগ্য শক্তির উৎস বিকাশে স্মার্ট ভিলেজ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। “স্মার্ট বাংলাদেশ' বলতে স্মার্ট নাগরিক, সমাজ, অর্থনীতি ও স্মার্ট সরকার গড়ে তোলা হবে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি ও আর্থিক খাতের স্মার্ট পদ্ধতিতে রূপান্তর হবে। বিভিন্ন কার্যক্রম ডিজিটাইজেশন করা হবে। মনে রাখতে হবে, স্মার্ট বাংলাদেশ কোনো বিশেষ রাজনৈতিক দলের নয়। দেশের ১৬ কোটি মানুষের ধ্যানজ্ঞান ও চিন্তা-ভাবনার কেন্দ্রবিন্দু হতে হবে। দেশপ্রেমিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন হিসেবে স্কাউট আগামী দিন সেবামূলক কর্মকাণ্ড সম্প্রসারণ করবে। বাংলাদেশকে উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশে রূপান্তরে স্কাউটদেরকে অগ্রসৈনিক হিসেবে ২০৪১ সালের স্মার্ট নাগরিক হিসেবে প্রস্তুত হতে হবে। স্মার্ট বাংলাদেশের স্মার্ট সিটিজেন গড়ার ক্ষেত্রে যে দক্ষ ছাত্রসমাজ এবং ছাত্রবান্ধব শিক্ষা ব্যবস্থা দরকার সে শিক্ষা ব্যবস্থা পড়ার ক্ষেত্রে স্কাউটিং এর মাধ্যমে গৌরবোজ্জ্বল ধারা অব্যাহত রাখবে।
স্কাউটিং কি: স্কাউট আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা কর্তৃক নির্ধারিত উদ্দেশ্য, মূলনীতি ও পদ্ধতিতে শিশু, কিশোর ও যুবকদের জন্য স্কাউটিং একটি স্বেচ্ছাসেবী,
অরাজনৈতিক ও শিক্ষামূলক আন্দোলন। জাতি ধর্ম নির্বিশেষে স্কাউটিং সকলের জন্য উন্মুক্ত।
স্কাউটিং হলো শিশু কিশোর ও যুবদের পর্যায়ক্রমিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সৎ চরিত্রবান, আত্মনির্ভরশীল, ধর্মভীরু ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সৎ আদর্শ দক্ষ, দায়িত্বশীল ও সুনাগরিক হিসাবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে পরিচালিত বিশ্বজোড়া এক মহান আন্দোলন।
স্কাউট আন্দোলনের মূলনীতি : সৃষ্টিকর্তার প্রতি কর্তব্য * পালন (আধ্যাত্মিক দিক)। * নিজের প্রতি কর্তব্য পালন (ব্যক্তিগত দিক) * অপরের প্রতি কর্তব্য পালন (সামাজিক দিক)
স্কাউট আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা রবার্ট স্টিফেনসন স্মিথ লর্ড বাডেন পাওয়েল অব গিলওয়েল (১৮৫৭-১৯৪১)
স্কাউট প্রতিজ্ঞাঃআমি আমার আত্নমর্যাদার উপর নির্ভর করে প্রতিজ্ঞা করছি যে, • আল্লাহ ও আমার দেশের প্রতি কর্তব্য পালন করতে, • সর্বদা অপরকে সাহায্যে করতে,• স্কাউট আইন মেনে চলতেআমি আমার যথাসাধ্য চেষ্টা করব।
কাব স্কাউট প্রতিজ্ঞা : আমি প্রতিজ্ঞা করছি যে,
আল্লাহ ও আমার দেশের প্রতি কর্তব্য পালন করতে, প্রতিদিন কারো না কারো উপকার করতে, কাব স্কাউট আইন মেনে চলতে আমি আমার যথাসাধ্য চেষ্টা করব।
স্কাউট আইন: সাতটি
১. স্কাউট আত্মমর্যাদায় বিশ্বাসী, ২. স্কাউট সকলের বন্ধু, ৩. স্কাউট বিনয়ী ও অনুগত, ৪ স্কাউট জীবের প্রতি সদয়, ৫. স্কাউট সদা প্রফুর, ৬. স্কাউট মিতব্যয়ী, ৭. স্কাউট চিন্তা, কথা ও কাজে নির্মল।
কাব স্কাউট আইন: দুইটি:
১. বড়দের কথা মেনে চলা ২. নিজেদের খেয়ালে কিছু না করা।
স্কাউট মটো কাব স্কাউট মটো: যথাসাধ্য চেষ্টা করা স্কাউট মটো: "সদা প্রস্তুত" রোভার স্কাউট মটো: "সেবা"
> স্কাউট স্লোগান:“প্রতিদিন কারও না কারো উপকার করা”
ট্রুপ মিটিং/প্যাক মিটিং/ক্রুমিটিংঃ ট্রুপ মিটিং/প্যাক মিটিং/ক্রুমিটিং হচ্ছে স্কাউট প্রোগ্রাম বাস্তবায়নের জন্য ৬০-৯০ মিনিট ব্যাপী নিয়মিত সাপ্তাহিক স্কাউট প্রশিক্ষণ কর্মসূচি।।
স্কাউট পদ্ধতি স্কাউট পদ্ধতি একটি ধারাবাহিক শিক্ষামূলক প্রক্রিয়া যার উপাদানগুলো হচ্ছে:
১. প্রতিজ্ঞা ও আইনের চর্চা এবং তার প্রতিফলন, ২. হাতে কলমে শিক্ষণ ৩. ছোট ছোট দলের সদস্য হিসেবে কাজ করা (যেমন: ষষ্ঠক উপদল পদ্ধতি) ৪. ক্রমোন্নতিশীল ও উদ্দীপনামূলক বিভিন্ন কার্যক্রম (ব্যাজ পদ্ধতি) ৫. বয়স্ক নেতার সহায়তা ৬. প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ ৭. প্রতীকী কাঠামো সকল ধরনের স্কাউট ৮. জনসম্পৃক্ততা
বয়স ভিত্তিক স্তর বিন্যাস:কাৰ স্কাউট : ৭ বছর থেকে ১১ বছর • স্কাউট ১১ বছর থেকে ১৮ বছর। • রোভার ১৭ বছর থেকে ২৫ বছর পর্যন্ত।(রেলগুরা, বিমান ও অনুরূপ প্রতিষ্ঠানে চাকরিজীবীদের জন্য ৩০ বছর পর্যন্ত)
স্কাউট চিহ্নের তাৎপর্য: ডান হাতের কব্জি থেকে হাতের অগ্রভাগ পর্যন্ত অংশকে 'সোনালি বন্ধন বা "Golden Tia" বলে। হাতের মাঝের তিনটি আঙুল দ্বারা প্রতিজ্ঞার তিনটি অংশকে বোঝায়। বুড়ো আঙ্গুলের বন্ধনের ফলে সৃষ্ট বৃত্ত সারা পৃথিবীতে স্কাউটদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববন্ধনকে বোঝায়।
পঞ্চশিলাঃ যার থেকে বিরত থাকা ও পরিহার করা জরুরি:- ১. জুয়া, ২. নেশা, ৩. যৌন আকাঙ্ক্ষা, ৪. শঠতা, ৫. নাস্তিকতা
ধর্মের সাথে স্কাউটিং এর সম্পর্ক:
ধর্মের প্রতি আনুগত্য স্কাউটিংয়ের মূলনীতির প্রথম ও প্রধান অংশ। স্কাউট প্রতিজ্ঞা ও আইন স্কাউট আন্দোলনের মূলভিত্তি। প্রতিজ্ঞতার প্রথম অংশই হল আল্লাহ স্রষ্টার প্রতি কর্তব্য পালন।আপনার সন্তান কেন স্কাউট হবে? • স্কাউটিং নিয়মানুবর্তী সময়ানুবর্তী হতে সাহায্য করে। •স্কাউটিং চরিত্র গঠনে সহায়ক। •স্কাউটিং শরীর সুস্থ ও সবল রাখতে সাহায্য করে। • স্কাউটিং সৎ ও সত্যবাদী হওয়ার শিক্ষা দেয়। •স্কাউটিং ছেলে-মেয়েকে চৌকোষ করে গড়ে তুলে। • স্কাউটিং বিশ্বভ্রাতৃত্ব ও বন্ধত্বের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে উদারতা শিক্ষা দেয়। স্কাউটিং ছেলে-মেয়েকে আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তুলে। • স্কাউটিং নিয়ম ও ধৈর্য শিক্ষা দেয়। • স্কাউটিং ছেলে-মেয়েকে কর্মঠ করে গড়ে তুলে। • স্কাউটিং শ্রমের মর্যাদা শেখায়। • স্কাউটিং সমাজের উপকারী নাগরিক সৃষ্টি করে। •স্কাউটিং ছেলে-মেয়েকে পরোপকারী ও জনসেবায় উদ্বুদ্ধ করে স্কাউটিং ছেলে-মেয়েকে অবসর সময়ে গঠন মুলক কাজে যোগ দিয়ে মূল্য বোধের অবক্ষয়রোধে সাহায্য করে।
লেখক, গবেষক ও স্কাউটার মোহাম্মদ সাইফুদ্দিन শিক্ষক- বায়তুশ শরফ আদর্শ কামিল মাদ্রাসা চট্টগ্রাম।
জেপি/নি-১৯/প/সাইফুল