নূতন শিক্ষাক্রমে গতানুগতিক পরীক্ষার ব্যবস্থা নেই, বরং নতুন ধরনের মূল্যায়নের কথা বলা হয়েছে। শিক্ষার্থী বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান কতটা মুখস্থ করতে পারছে, শিক্ষক কখনোই তার ভিত্তিতে শিক্ষার্থীর অর্জিত পারদর্শিতার মাত্রা নির্ধারণ করবেন না। বরং যে-সব পারদর্শিতার সূচকের ক্ষেত্রে বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান প্রাসঙ্গিক, সেখানে পাঠ্যপুস্তক বা অন্য যেকোনো নির্ভরযোগ্য উৎস থেকে তথ্য নিয়ে কীভাবে সেই তথ্য ব্যবহার করছে তার উপর শিক্ষার্থীর পারদর্শিতার মাত্রা নির্ভর করবে।
পূর্বে নম্বর প্রদানের প্রথা বিদ্যমান ছিল এতে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে বেশি নম্বর পাওয়ার অসম প্রতিযোগিতা ছিল। কিন্তু একজন শিক্ষার্থীর শুধুমাত্র নম্বর পাওয়ার মধ্যেই তার মেধা যোগ্যতা নির্ভর করে না। তার অন্যান্য যোগ্যতাসহ সকল যোগ্যতাকে মূল্যায়ন এবং দূর্বলতা সবলতা চিহ্নিত করে শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদানের মাধ্যমে বাস্তবমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণের কথা চিন্তা করে উন্নত দেশগুলোর মতো নতুন ধরনের মূল্যায়নের ধারা চালু করা হয়েছে। নতুন কারিকুলামে মূল্যায়ন প্রক্রিয়া শিখনকালীন ও সামষ্টিক এই দুটি পর্যায়ে সম্পন্ন করার কথা বলা হয়েছে। এর সাথে আচরণগত সূচক ট্রান্সক্রিপ্টে সংযুক্ত করার কথা বলা হয়েছে। ইতোমধ্যে কারিকুলাম বিস্তারণ বিষয়ক সরাসরি প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে এবং মূল্যায়ন প্রক্রিয়া সম্পর্কে মুক্তপাঠের মাধ্যমে অনলাইনে শিক্ষকগণ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। প্রশিক্ষণের ভিত্তিতে ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে শুরু হওয়া কারিকুলাম অনুযায়ী শিখনকালীন মূল্যায়ন চলমান আছে এবং বার্ষিক সামষ্টিক মূল্যায়নের কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
ষান্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়নের মতোই বাৎসরিক সামষ্টিক মূল্যায়নের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থী একটি নির্দিষ্ট এসাইনমেন্ট সম্পন্ন করবে এবং তার ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট পারদর্শিতার নির্দেশকসমূহ ব্যবহার করে তার মূল্যায়নের তথ্য রেকর্ড করতে হবে। এই মূল্যায়নের তথ্যের সাথে ষান্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়নের ট্রান্সক্রিপ্ট এবং বাকি শিখন অভিজ্ঞতাগুলোর শিখনকালীন মূল্যায়নের PI ইনপুট এর সমন্বয় করে শিক্ষার্থীর চূড়ান্ত ট্রান্সক্রিপ্ট ও রেকর্ড প্রস্তুত করতে হবে।
চূড়ান্ত ট্রান্সক্রিপ্ট সাধারণ নির্দেশনা (শিক্ষকদের জন্য)
শিক্ষার্থীদের সাংসারিক মূল্যায়নের জন্য প্রদত্ত কাজটি হাতে হাতে সম্পন্ন করতে সর্বমোট তিনটি সেশন বরাদ্দ করা হয়েছে। প্রথম দুইটি সেশনে ১০ মিনিট করে, এবং শেষ সেশনে দুই ঘণ্টা (বা বিষয়ভিত্তিক নির্দেশনা অনুযায়ী) সময়ের মধ্যে নির্ধারিত কাজগুলো শেষ করতে হবে। তবে শিক্ষার্থী সংখ্যা অনেক বেশি হলে শিক্ষক শেষ সেশনে কিছুটা বেশি সময় ব্যবহার করতে পারেন।
বাৎসরিক সামষ্টিক মূল্যায়নের প্রদত্ত রুটিন অনুযায়ী সকল কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে।
শিক্ষার্থীরা বেশিরভাগ কাজ সেশন চলাকালেই করবে, বাড়িতে গিয়ে করার জন্য খুব বেশি কাজ না রাখা ভালো যাতে শিক্ষার্থীদের জন্য মানসিক চাপ সৃষ্টি না করে এবং পুরো অভিজ্ঞতাটি যেন তাদের জন্য আনন্দময় হয়।
উপস্থাপনে যথাসম্ভব বিনামূল্যের উপকরণ ব্যবহার করতে নির্দেশনা দেয়া যায় যাতে উপকরণ সংগ্রহ করতে গিয়ে অভিভাবকদের কোনো আর্থিক চাপের সম্মুখীন হতে না হয় সেদিকে নজর রাখতে হবে।
বিষয়ভিত্তিক তথ্যের প্রয়োজনে পাঠ্যবই বা যেকোনো উৎস শিক্ষার্থী ব্যবহার করতে পারবে। তবে কোনো উৎস থেকেই হুবহু তথ্য তুলে দেয়ায় উৎসাহ না দিয়ে, বরং তথ্য ব্যবহার করে সে নির্ধারিত সমস্যার সমাধান করতে পারছে কি না, এবং সিদ্ধান্ত নিতে পারছে কি না তার উপর ভিত্তি করে মূল্যায়ন করতে হবে।
বাৎসরিক সামষ্টিক মূল্যায়ন রেকর্ড সংগ্রহ ও সংরক্ষণ:
বাৎসরিক সামষ্টিক মূল্যায়নের জন্য নির্ধারিত সকল যোগ্যতা ও সংশ্লিষ্ট পারদর্শিতার নির্দেশকসমূহ বা PI শিক্ষার্থীর কোন পারদর্শিতা দেখে তার অর্জনের মাত্রা নিরূপণ করতে হবে তাও ছকে উল্লেখ করা আছে। নির্ধারিত কাজ যেই দিন সম্পন্ন হবে সেদিনই সংশ্লিষ্ট PI এর ইনপুট দিতে হবে ও রেকর্ড সংরক্ষণ করতে হবে। এই ছকের প্রয়োজনীয় সংখ্যক ফটোকপি ব্যবহার করে নির্ধারিত পারদর্শিতার নির্দেশকে শিক্ষার্থীর অর্জনের মাত্রা রেকর্ড করতে হবে।
শিখনকালীন, ষান্মাসিক ও বাৎসরিক সামষ্টিক মূল্যায়ন সমন্বয়:
বাৎসরিক মূল্যায়নের ক্ষেত্রে ষান্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়নের ট্রান্সক্রিপ্ট, বাকি শিখন অভিজ্ঞতাগুলোর শিখনকালীন মূল্যায়নের PI ইনপুট এবং বাৎসরিক সামষ্টিক মূল্যায়নের সমন্বয়ে ট্রান্সক্রিপ্ট তৈরি করতে হবে।
ট্রান্সক্রিপ্ট প্রণয়ন:
ষান্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়নের ট্রান্সক্রিপ্ট, বাকি শিখন অভিজ্ঞতাগুলো শিখনকালীন মূল্যায়নের PI ইনপুট এবং বাৎসরিক সামষ্টিক মূল্যায়নের সমন্বয়ে শিক্ষার্থীর চূড়ান্ত ট্রান্সক্রিপ্ট ও রেকর্ড প্রণয়ন করতে হবে। এক্ষেত্রেও পূর্বের ন্যায় বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে করা মূল্যায়নের তথ্যে একই পারদর্শিতার নির্দেশকে কোনে শিক্ষার্থীর অর্জনের মাত্রা বা পর্যায় ভিন্ন ভিন্ন হলেও ট্রান্সক্রিপ্ট প্রণয়নের ক্ষেত্রে PI এর সর্বোচ্চ যেই পর্যায়ের ইনপুট পাওয়া যাবে সেটিই ট্রান্সক্রিপ্টে উল্লেখ করতে হবে।
কোনো শিক্ষার্থীর অনুপস্থিতিজনিত কারণে কোনো নির্দিষ্ট পারদর্শিতার নির্দেশকের ক্ষেত্রে যদি শিখনকালীন, ষাণ্মাসিক বা বাৎসরিক সামষ্টিক মূল্যায়ন কোনো ক্ষেত্রেই PI এর ইনপুট না পাওয়া যায়, তাহলে চূড়ান্ত ট্রান্সক্রিপ্টে সেই Pl এর ইনপুটের জায়গা ফাঁকা থাকবে।
বাৎসরিক মূল্যায়ন ট্রান্সক্রিপ্টের ফরম্যাট ব্যবহার করে প্রত্যেক পারদর্শিতার নির্দেশকের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর অর্জনের সর্বোচ্চ মাত্রা উল্লেখপূর্বক শিক্ষার্থীর ট্রান্সক্রিপ্ট প্রস্তুত করতে হবে। এখানে উল্লেখ্য, শিক্ষার্থীর মূল্যায়নের রেকর্ড সংগ্রহের জন্য , O, এই চিহ্নগুলো ব্যবহার করা হলেও ট্রান্সক্রিপে এই চিহ্নগুলোর কোনো উল্লেখ থাকবে না। তবে ট্রান্সক্রিপ্টের ফরম্যাটে উল্লিখিত চিহ্নগুলোর পরিবর্তে শিক্ষার্থীর অর্জিত সর্বোচ্চ পারদর্শিতার মাত্রা টিক চিহ্ন দিয়ে চিহ্নিত করা হবে।
আচরণিক নির্দেশক
বছর জুড়ে পুরো শিখন কার্যক্রম চলাকালে শিক্ষার্থীদের আচরণ, দলীয় কাজে অংশগ্রহণ, আগ্রহ, সহযোগিতামূলক মনোভাব ইত্যাদি পর্যবেক্ষণ করে এই নির্দেশকসমূহে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর অর্জনের মাত্রা নির্ধারণ করতে হবে। পারদর্শিতার নির্দেশকের পাশাপাশি এই আচরণিক নির্দেশকে অর্জনের মাত্রাও প্রত্যেক শিক্ষার্থীর বাৎসরিক ট্রান্সক্রিপ্টের অংশ হিসেবে যুক্ত থাকবে, যা ছক ব্যবহার করে আচরণিক নির্দেশকে মূল্যায়নের তথ্য সংগ্রহ করতে হবে।
প্রত্যেক শিক্ষার্থীর ১০ টি বিষয়ের আচরণিক নির্দেশকের অর্জিত মাত্রা বা পর্যায়ের ১০ জন বিষয় শিক্ষকের কাছ থেকে প্রাপ্ত BI এর ইনপুট সমন্বয় করে আচরণিক নির্দেশকের ট্রান্সক্রিপ্ট তৈরি করতে হবে।
আচরণিক নির্দেশকে ১০টি বিষয়ের সমন্বয়ের শর্তগুলো হলো:
- একটি আচরণিক নির্দেশকের জন্য ১০টি বিষয়ে একজন শিক্ষার্থী যেই পর্যায়টি সবচেয়ে বেশি বার পাবে সেইটিই হবে ঐ আচরণিক নির্দেশকে শিক্ষার্থীর অর্জিত চূড়ান্ত পর্যায়। উদাহরণস্বরূপ, যদি একজন শিক্ষার্থী ১ম আচরণিক নির্দেশকের ক্ষেত্রে ৪টি বিষয়ে O, ৩টি বিষয়ে এবং ৩টি বিষয়ে পায়, তবে ১ম আচরণিক নির্দেশকে তার অর্জিত চূড়ান্ত পর্যায় হলো O।
- যদি কোনো শিক্ষার্থী নির্দিষ্ট কোনো আচরণিক নির্দেশকের ক্ষেত্রে কোনো একটি পর্যায়ে সর্বোচ্চ সংখ্যক বার ইনপুট না পায়, অর্থাৎ একাধিক পর্যায়ে সমান সংখ্যক ইনপুট পাওয়া যায়, সেক্ষেত্রে তারমধ্যে অর্জিত সর্বোচ্চ পর্যায় বিবেচনা করতে হবে।
০ উদাহরণস্বরূপ, যদি একজন শিক্ষার্থী ১ম আচরণিক নির্দেশকের ক্ষেত্রে ৪টি বিষয়ে O, ৪টি বিষয়ে এবং ২টি বিষয়ে পায়, তাহলে এই নির্দেশকের ক্ষেত্রে তার অর্জিত চূড়ান্ত পর্যায় হবে ।
০ আবার কোনো শিক্ষার্থী একই নির্দেশকের ক্ষেত্রে যদি ৪টি বিষয়ে O, ২টি বিষয়ে এবং ৪টি বিষয়ে পায়, তবে তাহলে এই নির্দেশকের ক্ষেত্রে তার অর্জিত চূড়ান্ত পর্যায় হবে O।
শ্রেণি উত্তরণ নীতিমালা
শ্রেণি উত্তরণের বিষয়ে দুইটি দিক বিবেচনা করা হবে;
১। শিক্ষার্থীর বিদ্যালয়ে উপস্থিতির হার, ২। বিষয়ভিত্তিক পারদর্শিতা।
১। শিক্ষার্থী কোনো বিষয়ের জন্য নির্ধারিত শিখন অভিজ্ঞতাসমূহে নিয়মিত অংশগ্রহণ করছে কিনা সেটা প্রাথমিক বিবেচ্য; তার বিদ্যালয়ে উপস্থিতির হারের উপর ভিত্তি করে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। বিদ্যালয়ে মোট কর্মদিবসের অন্তত ৭০% উপস্থিতি নিশ্চিত হলে তাকে নিয়মিত শিক্ষার্থী হিসেবে গণ্য করা হবে এবং বছর শেষে বিষয়ভিত্তিক পারদর্শিতার বিবেচনায় সে পরবর্তী শ্রেণিতে উন্নীত হবে। যেহেতু নতুন শিক্ষাক্রম চলমান শিক্ষাবর্ষে (২০২৩) বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে, কাজেই এই বছরের জন্য মোট কর্মদিবসের কমপক্ষে ৫০% উপস্থিতি থাকলেও কোনো শিক্ষার্থীকে নিয়মিত শিক্ষার্থী হিসেবে পরবর্তী শ্রেণিতে উত্তরণের জন্য বিবেচনা করা যাবে। এছাড়াও এখানে উল্লেখ্য, জরুরি বা বিশেষ পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে উপস্থিতির হার ৫০% এর কম হলেও শিক্ষক কোনো শিক্ষার্থীকে শ্রেণি উত্তরণের জন্য যোগ্য বিবেচনা করতে পারেন; তবে তার জন্য যথেষ্ট যৌক্তিক কারণ ও তার সপক্ষে যথাযথ প্রমাণ থাকতে হবে।
২। দ্বিতীয় বিবেচ্য বিষয় হলো পারদর্শিতার নির্দেশকের ভিত্তিতে শিক্ষার্থীর অর্জনের মাত্রা। সর্বোচ্চ তিনটি বিষয়ের ট্রান্সক্রিপ্টে সবগুলো পারদর্শিতার নির্দেশকে কোনো শিক্ষার্থীর অর্জনের মাত্রা যদি -চতুর্ভুজ স্তরে থাকে, তবে তাকে পরবর্তী শ্রেণিতে উত্তরণের জন্য বিবেচনা করা যাবে না।
বিশেষভাবে বিবেচ্য বিষয়সমূহ:
- পারদর্শিতার বিবেচনায় কোনো শিক্ষার্থী যদি পরবর্তী শ্রেণিতে উত্তরণের জন্য বিবেচিত না হয়, তবে শুধুমাত্র উপস্থিতির হারের ভিত্তিতে তাকে উত্তীর্ণ করানো যাবে না।
- পারদর্শিতার বিবেচনায় যদি শিক্ষার্থী শ্রেণি উত্তরণের জন্য বিবেচিত হয়, কিন্তু উপস্থিতির হার নির্ধারিত হারের চেয়ে কম থাকে, সেক্ষেত্রে বিষয় শিক্ষকগণের সমন্বিত সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে বিদ্যালয় ওই শিক্ষার্থীর পরবর্তী শ্রেণিতে উত্তরণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
- যদি কোনো শিক্ষার্থী শ্রেণি উত্তরণের জন্য ন্যূনতম উপস্থিতির শর্ত পূরণ করে, কিন্তু কোনো যৌক্তিক কারণে (যেমন: অসুস্থতা, দুর্ঘটনা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ইত্যাদি) বাৎসরিক সামষ্টিক মূল্যায়নে অংশগ্রহণ করতে না পারে, সেক্ষেত্রে পূর্বতন পারদর্শিতার রেকর্ডের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট বিষয় শিক্ষকের দেয়া মতামত বিবেচনায় নিয়ে প্রতিষ্ঠান প্রধান এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। উল্লেখ্য, শিক্ষার্থীর পূর্বতন পারদর্শিতার রেকর্ড বলতে ষান্মাসিক ট্রান্সক্রিপ্ট এবং শিখনকালীন মূল্যায়নের রেকর্ড বোঝাবে। এক্ষেত্রে বাৎসরিক ট্রান্সক্রিপ্টও এই পূর্বতন রেকর্ডের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হবে। একইভাবে যদি কোনো শিক্ষার্থী উপস্থিতির শর্ত পূরণ করে যৌক্তিক কারণে (যেমন: অসুস্থতা, দুর্ঘটনা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ইত্যাদি) ষান্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়নে অনুপস্থিত থাকে, কিন্তু বাৎসরিক সামষ্টিক মূল্যায়নে অংশগ্রহণ করে, সেক্ষেত্রেও উপরোক্ত শর্তাবলি প্রযোজ্য হবে।
- যদি কোনো শিক্ষার্থী উপস্থিতির শর্ত পূরণ করে যৌক্তিক কারণে ষান্মাসিক ও বাৎসরিক সামষ্টিক মূল্যায়ন দুই ক্ষেত্রেই অনুপস্থিত থাকে, সেক্ষেত্রে শিখনকালীন মূল্যায়নের পারদর্শিতার ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট বিষয় শিক্ষকের দেয়া মতামত বিবেচনায় নিয়ে প্রতিষ্ঠান প্রধান তার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
- উত্তরণের জন্য বিবেচিত না হলেও সকল শিক্ষার্থী বছর শেষে তার পারদর্শিতার ভিত্তিতে ট্রান্সক্রিপ্ট পাবে। কোনো শিক্ষার্থীকে যদি পরবর্তী বছরে একই শ্রেণিতে পুনরাবৃত্তি করতে হয় তবে তার শিখন এগিয়ে নেবার জন্য একটি আত্মউন্নয়ন পরিকল্পনা (self development plan) করতে হবে, সংশ্লিষ্ট বিষয় শিক্ষক এক্ষেত্রে তাকে সহযোগিতা দিতে হবে।
- যদি কোনো শিক্ষার্থী এক বা একাধিক বিষয়ে শিখন ঘাটতি নিয়ে পরবর্তী শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়, তাহলে ওই শিক্ষার্থীর জন্য পরবর্তী শিক্ষাবর্ষের প্রথম ছয় মাসের একটি শিখন উন্নয়ন পরিকল্পনা (learning enhancement strategy) করতে হবে যাতে সে তার শিখন ঘাটতি পুষিয়ে নিতে পারে।
রিপোর্ট কার্ড বা পারদর্শিতার সনদ: নৈপুণ্য
বছর শেষে এক নজরে সকল বিষয়ে শিক্ষার্থীর সার্বিক অবস্থান তুলে ধরতে একটি রিপোর্ট কার্ড প্রণয়ন করা হবে যেখানে প্রতিটি বিষয়ে তার সার্বিক পারদর্শিতার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেয়া থাকবে, যা থেকে শিক্ষার্থী নিজে এবং অভিভাবকরা সহজেই শিক্ষার্থীর অবস্থান বুঝতে পারেন। মূলত মূল্যায়ন অ্যাপের মাধ্যমেই ট্রান্সক্রিপ্ট এবং রিপোর্ট কার্ড স্বয়ক্রিয়ভাবে তৈরি হবে। কিন্তু বিভিন্ন কারণে অ্যাপ থেকে সম্ভব না হলে শিক্ষকগণ এই ফরম্যাট ফটোকপি করে ম্যানুয়ালি রিপোর্ট কার্ড প্রস্তুত করতে পারেন।
রিপোর্ট কার্ডে কোনো বিষয়েরই PI সমূহ উল্লেখ করা থাকবে না। বরং প্রতিটি বিষয়ে শিক্ষার্থীর সার্বিক অবস্থান কয়েকটি নির্দিষ্ট পারদর্শিতার ক্ষেত্রের মাধ্যমে প্রকাশ করা হবে। কোন শ্রেণীর কোন নির্দিষ্ট একটি বিষয়ে শিক্ষার্থীর পারদর্শিতা যাচাই করতে প্রতিটি একক যোগ্যতার জন্য এক বা একাধিক PI নির্ধারণ করা আছে। তেমনি কোন শ্রেণীর কোন নির্দিষ্ট একটি বিষয়ে পরস্পর সম্পর্কযুক্ত একক যোগ্যতাসমূহে শিক্ষার্থীর অর্জন সমন্বিতভাবে প্রকাশ করার জন্য নির্দিষ্ট পারদর্শিতার ক্ষেত্র চিহ্নিত করা হয়েছে।
প্রতিটি পারদর্শিতার ক্ষেত্রের জন্য সংশ্লিষ্ট PI সমূহে শিক্ষার্থীর অর্জিত পর্যায়সমূহ সমন্বয় করে ঐ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর অবস্থান নিরূপণ করা হবে।
পারদর্শিতার ক্ষেত্রের বর্ণনা
যেহেতু প্রতিটি বিষয়ে পারদর্শিতার নির্দেশকের সংখ্যা অনেকগুলো এবং এদের পর্যায় মাত্রা ৩টি, এর সাহায্যে শিক্ষার্থীর সার্বিক অবস্থান বোঝা সম্ভব হয় না। সেজন্য প্রতিটি পারদর্শিতার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট PI সমূহে শিক্ষার্থীর অর্জিত পর্যায়সমূহের সমন্বয় করে ওই ক্ষেত্রে তার অবস্থান বোঝানো হবে। শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষক সকলেই শিক্ষার্থীর অবস্থান স্পষ্টভাবে বুঝতে পারে এজন্য একটি ৭-স্তর বিশিষ্ট মূল্যায়ন স্কেল দিয়ে প্রকাশ করা হবে।
পারদর্শিতার সনদে ৭ স্তর বিশিষ্ট মূল্যায়ন স্কেলে শিক্ষার্থীর অর্জন প্রকাশ করা হবে এভাবে;
অনন্য (Upgrading), অর্জনমুখী (Achieving), অগ্রগামী (Advancing), সক্রিয় (Activating), অনুসন্ধানী (Exploring), বিকাশমান (Developing), প্রারম্ভিক (Elementary)
পারদর্শিতার স্তর নির্ধারণের উপায়
কোনো নির্দিষ্ট পারদর্শিতার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর অবস্থান মূলত নির্ভর করবে PI সমূহে তার অর্জিত সর্বোচ্চ (- ত্রিভুজ চিহ্নিত পর্যায়) ও সর্বনিম্ন (-চতুর্ভুজ চিহ্নিত পর্যায়) পর্যায়ের PI এর সংখ্যার পার্থক্যের উপর।
এই কাজটি করতে নিচের সূত্র ব্যবহার করতে হবে:
পারদর্শিতার স্তর নির্ণায়ক মান = (অর্জিত সর্বোচ্চ পর্যায়ে র PI এর সংখ্যা-অর্জিত সর্বনিম্ন পর্যায়ে র PI এর সংখ্যা )/(মোট PI এর সংখ্যা)×১০০%
উদাহরণস্বরূপ, 'যোগাযোগ' শিরোনামের পারদর্শিতার ক্ষেত্রের সাথে সংশ্লিষ্ট PI ৪টি (৬.১.১, ৬.১.২ ৬.২.১, ৬.২.২)। কোনো শিক্ষার্থী এই ৪টি PI এর মধ্যে ২টিতে সর্বোচ্চ পর্যায় (ত্রিভুজ চিহ্নিত পর্যায়) পেয়েছে। বাকি ১টির একটিতে সর্বনিম্ন (চতুর্ভুজ চিহ্নিত পর্যায়) পেয়েছে এবং অন্যটিতে মাধ্যমিক পর্যায় (বৃত্ত চিহ্নিত পর্যায়) পেয়েছে।
এখানে, মোট PI এর সংখ্যা: ৪টি, অর্জিত সর্বোচ্চ পর্যায়ের PI এর সংখ্যা: ২টি, অর্জিত সর্বনিম্ন পর্যায়ের PI এর সংখ্যা: ১টি
তাহলে তার পারদর্শিতার স্তর নির্ণায়ক মান হবে, পারদর্শিতার স্তর নির্ণায়ক মান = (২—১)/৪১০০%=২৫%
এই মানের উপর ভিত্তি করে নির্ধারণ করা হবে শিক্ষার্থীর অবস্থান পারদর্শিতার কোন স্তরে।
পারদর্শিতার স্তর নির্ণায়ক মান ধনাত্মক, ঋণাত্মক বা শূন্য হতে পারে ।
পারদর্শিতার স্তর নির্ণায়ক মান ধনাত্মক হবে: যদি শিক্ষার্থীর অর্জিত সর্বোচ্চ পর্যায়ের ( ত্রিভুজ চিহ্নিত পর্যায়) PI এর সংখ্যা সর্বনিম্ন পর্যায়ের ( চতুর্ভুজ চিহ্নিত পর্যায়) Pl এর সংখ্যার চেয়ে বেশি হয়।
পারদর্শিতার স্তর নির্ণায়ক মান ঋণাত্মক হবে: যদি শিক্ষার্থীর অর্জিত সর্বোচ্চ পর্যায়ে র PI এর সংখ্যা ( ত্রিভুজ চিহ্নিত পর্যায়) সর্বনিম্ন ( চতুর্ভুজ চিহ্নিত পর্যায়) পর্যায়ের Pl এর সংখ্যার চেয়ে কম হয়।
পারদর্শিতার স্তর নির্ণায়ক মান শূন্য হবে: যদি শিক্ষার্থীর অর্জিত সর্বোচ্চ পর্যায়ের (ত্রিভুজ চিহ্নিত পর্যায়) PI এর সংখ্যা এবং সর্বনিম্ন পর্যায়ের ( চতুর্ভুজ চিহ্নিত পর্যায়) PI এর সংখ্যা সমান হয়।
পারদর্শিতার সবগুলো স্তর নির্ধারণের শর্তগুলো দেয়া হলো:
১. অনন্য (Upgrading)- পারদর্শিতার স্তর নির্ণায়ক মান = ১০০%, 2. অর্জনমুখী (Achieving)- পারদর্শিতার স্তর নির্ণায়ক মান ≥ ৫০%, 3. অগ্রগামী (Advancing)- পারদর্শিতার স্তর নির্ণায়ক মান ≤ ২৫%, 4. সক্রিয় (Activating)- পারদর্শিতার স্তর নির্ণায়ক মান ≤ 0%, 5. অনুসন্ধানী (Exploring)- পারদর্শিতার স্তর নির্ণায়ক মান ≤ - ২৫%, 6. বিকাশমান (Developing)- পারদর্শিতার স্তর নির্ণায়ক মান ≤ - ৫0%, 7. প্রারম্ভিক (Elementary)- পারদর্শিতার স্তর নির্ণায়ক মান ≤ - ১০০%
তাহলে এই শর্ত অনুযায়ী উপরের উদাহরণে পারদর্শিতার স্তর নির্ণায়ক মান ০% হলে ওই শিক্ষার্থীর অবস্থান হবে 'সক্রিয় Activating)'।
আচরণিক নির্দেশকের জন্য চিহ্নিত ক্ষেত্রসমূহ
প্রতিটি ক্ষেত্রের সাথে সংশ্লিষ্ট আচরণিক নির্দেশকসমূহে শিক্ষার্থীর অর্জিত পর্যায় সমন্বয় করে নির্দিষ্ট আচরণিক ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর ফলাফল নিরূপণ করা হবে। রিপোর্ট কার্ডে গারদর্শিতা ও আচরণিক ক্ষেত্র দুইটি উল্লেখ করা থাকবে, যা দেখে শিক্ষার্থীর সার্বিক অবস্থার একটি চিত্র বোঝা যাবে।
রিপোর্ট কার্ডে উল্লিখিত আচরণিক ক্ষেত্রগুলো নিম্নরূপ:
১। অংশগ্রহণ ও যোগাযোগ ২। নিষ্ঠা ও সততা ৩। পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সহযোগিতা
ট্রান্সক্রিপ্টে উল্লিখিত ১০টি আচরণিক নির্দেশকের প্রত্যেকটি উপরের কোনো না কোনো ক্ষেত্রের সাথে সংশ্লিষ্ট। PI এর ইনপুট হিসেব করে যেভাবে বিষয়ভিত্তিক পারদর্শিতার ক্ষেত্রে ফলাফল নিরূপণ করা হবে, একইভাবে BI এর ইনপুটের ভিত্তিতে উপরের ৩ টি আচরনিক ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর অবস্থান নিরূপণ করতে হবে। সকল শ্রেণির জন্য একই আচরণিক ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর ফলাফল নির্ধারণ করা হবে। পারদর্শিতার ক্ষেত্রের মতই আচরণিক ক্ষেত্রের জন্যেও সংশ্লিষ্ট BI এ শিক্ষার্থীর অর্জিত পর্যায় একই সূত্র ব্যবহার করে হিসেব করে ৭ স্তর বিশিষ্ট স্কেলে শিক্ষার্থীর অবস্থান নিরূপণ করা হবে।
আচরণিক ক্ষেত্রের সাথে সংশ্লিষ্ট BI সমূহ উল্লেখ করা হলো।
আচরণিক ক্ষেত্র-১। অংশগ্রহণ ও যোগাযোগ-এর আচরণিক নির্দেশক বা BI হল- ক। দলীয় কাজে সক্রিয় অংশগ্রহণ করছে, খ। নিজের বক্তব্য ও মতামত দলের সবার সাথে শেয়ার করছে, এবং অন্যদের বক্তব্য শুনে গঠনমূলক আলোচনায় অংশ নিচ্ছে, গ। দলের অন্যদের কাজের উপর ভিত্তি করে গঠনমূলক ফিডব্যাক দিচ্ছে।
ঘ। ব্যক্তিগত যোগাযোগ, উপস্থাপন, মডেল তৈরি , উপকরণ নির্বাচন ও ব্যবহার , ইত্যাদি ক্ষেত্রে পরিমিতিবোধ, বৈচিত্র্যময়তা ও নান্দনিকতা বজায় রেখে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।
আচরণিক ক্ষেত্র-২ - নিষ্ঠা ও সততা এর আচরণিক নির্দেশক বা BI হল- ক। নির্দিষ্ট সমস্যা সমাধানে পূর্বনির্ধারিত প্রক্রিয়া অনুযায়ী কাজের ধাপসমূহ যথাযথভাবে অনুসরণ করছে, খ। শিখন অভিজ্ঞতাসমূহ চলাকালে পাঠ্যপুস্তকে বর্ণিত কাজগুলো সম্পন্ন করছে এবং বইয়ের নির্ধারিত স্থানে প্রয়োজনীয় ছক/অনুশীলনী পূরণ করছে, গ। পরিকল্পনা অনুযায়ী যথাসময়ে নির্ধারিত কাজ সম্পন্ন করছে, ঘ। দলীয় ও একক কাজের বিভিন্ন ধাপে সততার পরিচয় দিচ্ছে।
আচরণিক ক্ষেত্র-৩- পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সহযোগিতা- আচরণিক নির্দেশক বা BI হল- ক। নিজের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি অন্যদের কাজে সহযোগিতা করছে এবং দলে সমন্বয় সাধন করছে, খ। অন্যদের দৃষ্টিভঙ্গির ভিন্নতা ও বৈচিত্র্যের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে তাদের মতামতের গঠনমূলক সমালোচনা করছে।
মূল্যায়ন অ্যাপ:
মূল্যায়নের অ্যাপ এর সাহায্যে নির্ধারিত সময়ে PI এর ইনপুট দেয়া যাবে এবং খুব সহজেই শিক্ষার্থীর ট্রান্সক্রিপ্ট ও রিপোর্ট কার্ড আউটপুট হিসেবে নেয়া যাবে। ম্যানুয়ালি যেভাবে PI এর অর্জিত পর্যায় হিসাব করে ফলাফল তৈরি করতে হয়, তা অনেকটাই সহজ হয়ে আসবে এই অ্যাপ ব্যবহারের মাধ্যমে।
লেখক ও গবেষক: মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন, চট্টগ্রাম।