সাইফুল ইসলাম, চট্টগ্রাম:

যে সব দ্রব্য সেবনে মানুষের শারীরিক ও মানসিক অবসন্নতা আনয়ন করে বা কোনো ক্ষেত্রে স্নায়ুর উত্তেজনা সৃষ্টি এবং ব্যথা উপশম করে তাই হল মাদকদ্রব্য । সাধারণত মাদকদ্রব্য আসক্ত হওয়ার প্রবণতাকেই মাদকাসক্তি করে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, “যখন কোন ব্যক্তি মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণে কোন ড্রাগ গ্রহণ করার ফলে এমন এক অবস্থায় পৌঁছায় যা তার নিজের ও সমাজের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়, তখন তাকে মাদকাসক্তি বলে।”  মাদকাসক্তি এক প্রকার আত্মবিনাশকারী নেশা। এ আসক্তি প্রথম প্রথম সেবনকারীকে কিছুটা স্বস্তি দেয় সত্য কিন্তু অচিরেই সেবনকারী চরম বেদনা ও দুর্বিষহ অবস্থার শিকার হয়ে পড়ে। সুতরাং মাদকাসক্তি বলতে উত্তেজনা ও অবসাদ সৃষ্টিকারী এমন দ্রব্যকে বুঝায় যা সেবন করলে তা পুনরায় সেবন করার জন্য সেবনকারীর মধ্যে তীব্র আসক্তির সৃষ্টি করে। আমাদের দেশে সাধারণত গাঁজা, ভাং, চরস, আফিম, হিরোইন, কোকেন, মদ ইত্যাদি মাদকদ্রব্য হিসেবে পরিচিত। এর সঙ্গে আরও রয়েছে তরল অ্যালকোহল শ্রেণির মদ । যেমন- রাম, ভদকা, হুইস্কি ইত্যাদি ।

বাংলাদেশের মাদক পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে মাদকাসক্তদের মধ্যে ৮৪ শতাংশ পুরুষ, ১৬ শতাংশ নারী। সমাজের বিত্তশালী ব্যক্তি থেকে শুরু করে নারী ও শিশু-কিশোরেরাও মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। ওই প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, দেশজুড়ে প্রায় সাড়ে তিন লাখ মানুষ নানাভাবে মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। এ ছাড়া মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী দেশে আসক্তদের শতকরা ৯০ ভাগকে কিশোর-তরুণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের শতকরা ৪৫ ভাগ বেকার ও ৬৫ ভাগ আন্ডারগ্র্যাজুয়েট। আর উচ্চশিক্ষিতের সংখ্যা ১৫ শতাংশ। তবে আরো বেশ কয়েকটি সংস্থার তথ্যানুযায়ী, অবৈধ মাদকদ্রব্য আমদানির জন্য প্রতিবছর ১০ হাজার কোটিরও বেশি টাকার মুদ্রা বিদেশে পাচার হচ্ছে।

বর্তমানে মাদকাসক্তদের পরিসংখ্যানের কোনো তথ্য না থাকলেও বেসরকারিভাবে দেশে প্রায় ৭৫ লাখের বেশি মাদকাসক্ত রয়েছে এবং মাদকসেবীদের মধ্যে ৮০ শতাংশই যুবক, তাদের মধ্যে ৪৩ শতাংশ বেকার। ৫০ শতাংশ অপরাধের সঙ্গে জড়িত রয়েছে। কিছুদিন আগেও যারা ফেনসিডিলে আসক্ত ছিল, তাদের বেশির ভাগই এখন ইয়াবা আসক্ত। সম্প্রতি ইয়াবা আমাদের দেশের তরুণসমাজকে গ্রাস করেছে। প্রতিদিন যেমন ইয়াবা ধরা হচ্ছে, তেমনি প্রতিদিন হাজার হাজার পিস ইয়াবা তরুণরা গ্রহণ করছে। একটি পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, মাদকসেবীরা গড়ে প্রতিদিন অন্তত ২০ কোটি টাকার মাদক সেবন করে থাকে; হিসাব অনুযায়ী মাসে ৬০০ কোটি টাকা। অন্যদিকে সারা দেশে প্রায় ৩০ লাখ মাদক কারবারি প্রতিদিন কমপক্ষে প্রায় ২০০ কোটি টাকার মাদক কেনা-বেচা করে। আরো একটি ভয়ংকর চিত্র হচ্ছে, সারা দেশের ছড়িয়ে পড়া ইয়াবার শতকরা ৮৫ ভাগই ভেজাল, যার ফলে এসব ইয়াবা গ্রহণকারী মাদকাসক্ত নানা ধরনের জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে; তার মধ্যে কিডনি, লিভার ছাড়াও মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কাজকর্ম নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। মাদক গ্রহণকারীদের কাছে ইদানীং জনপ্রিয় হয়ে উঠছে সিসা। সিসা সেবন সিগারেটের মতোই ক্ষতিকর। সিসা অথবা হার্বাল তামাকের কারণে মানুষ উচ্চমাত্রার কার্বন-মনোক্সাইডজনিত সমস্যায় আক্রান্ত হতে পারে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, একবার সিসা সেবনে একটি সিগারেটের চেয়ে চার-পাঁচ গুণ বেশি কার্বন-মনোক্সাইড গ্রহণ করা হয়ে থাকে। উচ্চমাত্রার কার্বন-মনোক্সাইডে মস্তিষ্কের ক্ষতি হতে পারে এবং অচেতন হওয়ার আশঙ্কা থাকে। যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য বিভাগ ও মাদক নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের সাম্প্রতিক এক গবেষণায় এ তথ্য পাওয়া যায়। এটি সহজেই অনুমান করা যায় যে দেশে মাদকাসক্তির কারণে যুবসমাজের নিজেদের জীবন শুধু বিপন্ন হয় না, এতে গোটা পরিবার বা সমাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তা ছাড়া ইনজেকশনের মাধ্যমে মাদক গ্রহণের কারণে দেশে এইডস আক্রান্তের সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০১৪ সাল পর্যন্ত দেশে এইচআইভি (পজিটিভ) রোগীর সংখ্যা তিন হাজার ৬৭৪ জন। এর মধ্যে এইডস রোগী এক হাজার ৪১৪ জন।

একটি সূত্র জানায়, দেশের প্রায় ৫১২টি পয়েন্টে প্রতিদিন হেরোইন, আফিম, প্যাথেডিন, ফেনসিডিল, গাঁজাসহ বিভিন্ন ধরনের মাদক বিক্রি হয়। এ ছাড়া ভারত থেকে প্রতিদিন বাংলাদেশে আসছে ১০ লাখ বোতল ফেনসিডিলসহ অন্যান্য মাদকদ্রব্য। সর্বত্র হাত বাড়ালেই মিলছে এসব। সংঘবদ্ধ চোরাচালানি চক্র সব সময় বেপরোয়াভাবে ফেনসিডিল আনছে। বাস, ট্রাক, ট্রেনে সেই ফেনসিডিল ছড়িয়ে পড়ছে সারা দেশে। বাংলাদেশে মাদকাসক্তরা তাদের আসক্তির পেছনে বছরে খরচ করে কমপক্ষে পাঁচ হাজার কোটি টাকা।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী একজন মাদকাসক্ত তার নেশার পেছনে প্রতিদিন সর্বোচ্চ ৫০০ থেকে সর্বনিম্ন ৫০ টাকা খরচ করে। তবে বেশির ভাগের ক্ষেত্রেই দৈনিক খরচ ১০০ থেকে ২০০ টাকার মধ্যে। পক্ষান্তরে এই নেশার টাকার জোগান দিতে আসক্তরা বেছে নেয় বিভিন্ন অন্যায় পথ। যার ফলে সৃষ্টি হচ্ছে খুন, ছিনতাই, ডাকাতির মতো ঘটনা। নেশার জন্য বাবা খুন হচ্ছে সন্তানের হাতে। সেই খুনের দায় বহন করে ছেলেটি হয় জেলে, না হয় অন্ধকার জগতে প্রবেশ করছে। এভাবে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে মাদক মানুষকে ঠেলে দিচ্ছে অবাধ ও বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে।

এখানেই শেষ নয়, ৪০ বছর বয়সের পরে আকস্মিক মৃত্যুর ৫০ শতাংশই ঘটে মাদকাসক্তির কারণে। আর সেই লোকটি মৃত্যুর আগে রেখে যায় কিছু উত্তরসূরি। মাদকাসক্তদের ৫৯ শতাংশই আসে এমন পরিবার থেকে, যাদের মাসিক আয় এক হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকার মধ্যে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী মাদকাসক্তদের ৩০ শতাংশই শুধু নেশার খরচ জোগান দিতে নানা অপরাধ কর্মে জড়িয়ে পড়ে। এসব জরিপে যে তথ্যটি সবচেয়ে বেশি আতঙ্ক ও ভয়ের কারণ, তা হচ্ছে দেশে মাদকাসক্তদের ৯১ শতাংশই কিশোর তরুণ ও যুবক বয়সী। আর এই আসক্তির ভয়াবহ বিস্তার ঘটেছে ছাত্র ও শিক্ষিত বেকারদের মধ্যে।

আমাদের দেশে মহিলাদের মধ্যেও মাদকাসক্তের সংখ্যা বাড়ছে। এটি উদ্বেগের কারণ। নারী আসক্তদের ৯০ শতাংশের বয়স ১৫ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে। বাকি ৩৫-৪৫ বছরের মধ্যে। মাদকাসক্তদের মধ্যে শতকরা পাঁচজন নারী। তাদের মধ্যে ছাত্রী, গৃহিণী, ব্যবসায়ী ও চাকরিজীবী রয়েছে।

একটি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, জীবনীশক্তি ধ্বংসকারী ইয়াবা সেবনকারীরা খুব অল্প সময়ের মধ্যেই মানসিক বিকারগ্রস্ত হয়ে পড়ছে এবং যৌনশক্তি হারিয়ে ফেলছে চিরতরে। কিডনিসংক্রান্ত নানা জটিলতায়ও ভুগছে তারা। বিভিন্ন মাদক নিরাময় কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন ইয়াবা আসক্তদের ওপর পর্যবেক্ষণ করে চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা এসব তথ্য জানিয়েছেন।

সূত্র জানায়, বর্তমানে দেশের বিভিন্ন মাদক নিরাময় কেন্দ্রে  প্রায় ১৫ হাজার মাদকাসক্ত চিকিৎসা পাচ্ছে। এর মধ্যে প্রায় ৯ হাজার ইয়াবাসেবী। একটানা মাত্র দুই-আড়াই বছর ইয়াবা সেবনের ফলেই তারা মারাত্মকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। তাদের নার্ভগুলো সম্পূর্ণ বিকল হয়ে পড়ছে। এরই মধ্যে দেশে ইয়াবা আসক্তির সংখ্যা ৩০ লাখ ছাড়িয়ে গেছে বলে ধারণা করছে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর।

সর্বনাশা মাদকের কারণে যুবসমাজ যে শুধু মেধাশূন্য হচ্ছে তা-ই নয়, এ মাদকাসক্তদের মধ্যে মনুষ্যত্বও লোভ পাচ্ছে।

সম্প্রতি আমাদের দেশের সংবাদপত্রে প্রতিদিন যেসব খুন, সন্ত্রাস, মেয়েদের উত্ত্যক্ত করার ঘটনাসহ অপরাধের যেসব খবর ছাপা হচ্ছে, তার সব ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে দেশের তরুণ যুবসমাজ এর একটি অংশ।

আধুনিক জগতে মাদকাসক্তি একটি ভয়াবহ সমস্যা। প্রায় ৫০ কোটি লোক মাদকাসক্তির শিকার। বাংলাদেশও সমস্যা প্রতিনিয়ত মারাত্মক আকার ধারণ করছে। অনুমান করা হচ্ছে বাংলাদেশে বর্তমানে ১২ লক্ষেরও অধিক লোক বিভিন্ন প্রকার মাদকাসক্তির শিকার। তন্মধ্যে কয়েক লক্ষ লোক মরণ বিষ হিরোইনে আসক্ত।

মাদকাসক্ত হওয়ার কারণ:

মানুষ যেসব সুনির্দিষ্ট কারণে মাদকদ্রব্য অপব্যবহার করে নেশাগ্রস্ত হয় সেগুলো হল- ১.মাদকদ্রব্যের প্রতি কৌতূহল। ২. বন্ধু বান্ধব ও সঙ্গীদের প্রভাব। ৩.নতুন অভিজ্ঞতা লাভের আশা। ৪.সহজ আনন্দ লাভের বাসনা। ৫. মাদকদ্রব্যের সহজলভ্যতা। ৬. নৈতিক শিক্ষার অভাব। ৭.পারিবারিক কলহ ও অশান্তি।  ৮.বেকারত্ব, আর্থিক অনটন ও জীবনের প্রতি হতাশা ও ৯.মাদকদ্রব্যের কুফল সম্পর্কে অজ্ঞতা ।

মাদকাসক্তির প্রভাব: মাদকাসক্তি প্রাণনাশকারী এবং যৌবন হরণকারী। এটি আণবিক বোমার চেয়েও ভয়ংকর। আমাদের ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে মাদকাসক্তির ক্ষতিকর প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া বহুমুখী, ব্যাপক ও গভীর। নিম্নে আমাদের সমাজ জীবনে মাদকাসক্তির প্রভাব বর্ণিত হল-

মৃত্যুহার: মাদকের রাসায়নিক ক্রিয়ার নেশা গ্রহণকারীর ফুসফুস, মস্তিষ্ক এবং স্নায়বিক পদ্ধতির স্বাভাবিক কার্যক্রম দারুণভাবে ব্যাহত হয়ে যা তাকে অকাল মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়। ফলে সমাজে মৃত্যুর হার বেড়ে যায়।

দারিদ্র নির্ভরশীলতা: মাদকদ্রব্য সেবনের ফলে ব্যক্তি ধীরে ধীরে তার কর্মক্ষমতা ও উপার্জন ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। ফলে তার মাঝে দারিদ্র্য ও নির্ভরশীলতা দেখা দেয়।

দুর্ঘটনার হার বৃদ্ধি: নেশা ব্যক্তির শারীরিক ও মানসিক কার্যক্রম স্তিমিত করে ফেলে। তাই নেশা গ্রহণ করে যে কোন যানবাহন চালালে বা শিল্প, মিল-কারখানা প্রভৃতি ক্ষেত্রে কাজ করলে দুর্ঘটনার হার বৃদ্ধি পায়।

অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি: মাদকদ্রব্য সমাজে নানাভাবে অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি করে। কেননা, মাদকদ্রব্য সেবনের ফলে ব্যক্তির মাঝে অস্বাভাবিকতা, বিচারবুদ্ধিহীনতা ও পাশবিকতা দেখা দেয়। ফলে মাদকদ্রব্য সেবনকারীর মাঝে যে কোন প্রকার অপরাধ প্রবণতা দেখা দিতে পারে। তাছাড়া, মাদকদ্রব্য ক্রয় করার জন্য ব্যক্তি যে কোন অপরাধের সাথে জড়িত হতে পারে।

পরিবার: বাংলাদেশসহ পৃথিবীর সব সমাজেই পরিবারের ওপর মাদকাসক্তির প্রভাব অত্যন্ত মারাত্মক। কেননা, মাদকদ্রব্য গ্রহণের ফলে এর প্রতিক্রিয়ার দাম্পত্য কলহ, বিবাহ বিচ্ছেদ, পারিবারিক ভাঙন, পারিবারিক দ্বন্দ্ব, বিকৃত যৌন জীবন, পলায়ন, হত্যা, আত্মহত্যা, খুন প্রভৃতি ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পায়।

শিশুদের জীবন: মাদকাসক্ত পিতামাতার জীবন পদ্ধতি সন্তানের জীবনের ওপর প্রভাব বিস্তার করে। কেননা, তারা তাদের সন্তান-সন্ততিদের সঠিকভাবে তত্ত্বাবধান ও পরিচর্যা করতে পারে না। ফলে সন্তানেরা নিরাপত্তাহীন, নির্ভরশীল ও অবহেলিত হয়। এসব সন্তানেরা সুষ্ঠু সামাজিকীকরণ এবং সুন্দর ব্যক্তিত্ব নিয়ে গড়ে উঠতে পারে না। তাছাড়া মাদকাসক্ত মাতার সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পূর্বেই এর প্রভাবে বিভিন্ন ধরনের দৈহিক ও মানসিক ক্ষতির শিকার হয়।

চোরাকারবার বৃদ্ধি: মাদকাসক্তির আরেকটি মারাত্মক প্রতিক্রিয়া হল চোরাকারবার। মাদকদ্রব্যের ব্যবসা খুব লাভজনক বলে লোভী ব্যক্তিরা তাদের পুঁজি মাদকদ্রব্যের চালানে খাটাচ্ছে। এতে করে দেশের অর্থনীতি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

নৈতিক অধঃপতন: মাদকদ্রব্যের সাথে অবৈধ যৌন সম্পর্ক, পাপ এবং বেশ্যাবৃত্তির নিবিড় সম্পর্ক বিরাজমান। মাদকদ্রব্য সেবনের পর ব্যক্তির ব্যক্তিত্বের বাহ্যিক আচরণ প্রকাশ পায়, বিবেক লোপ পায় ও পাশবিকতা বেড়ে যায়। মাদকদ্রব্য সেবনের যৌন সংক্রান্ত যে কোন ব্যাপারে নৈতিক অধঃপতন দেখা দেয়।

মাদকাসক্তি বর্তমানে বাংলাদেশের শুধু একটি ভয়াবহ সামাজিক সমস্যাই নয়, বরং অন্যান্য বহুবিধ সমস্যার কারণও বটে। এটি ব্যক্তি জীবনের পাশাপাশি পারিবারিক ও সমাজ জীবনে অনিবার্য বিপর্যয় বয়ে আনে।

মাদকাসক্তি প্রতিকারের উপায়: ১.নৈতিক শিক্ষা কার্যক্রম প্রসার করা। ২.বেকারদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা। ৩.মাদকদ্রব্যের সহজলভ্যতা রোধ করা। ৪.মাদকদ্রব্য আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ করা। ৫.মাদকদ্রব্যের কুফল সবার কাছে তুলে ধরা। ৬.মাদকাসক্তদের সমাজে প্রতিষ্ঠার ব্যবস্থা করা ও ৭.মাদকদ্রব্য প্রতিরোধ দিবস জাতীয়ভাবে পালন করা।

মাদকের ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তির চিকিৎসার সব পর্যায়ে পরিবারের অংশগ্রহণ ও সহযোগিতা প্রয়োজন। মাদকের ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তি স্বভাবতই চিকিৎসা নিতে চায় না। কারণ সে বুঝতেই পারে না যে তার চিকিৎসার প্রয়োজন। আবার অনেকেই শারীরিক যন্ত্রণার ভয়ে মাদক চিকিৎসায় অনীহা পোষণ করে। এ ক্ষেত্রে পরিবারের স্ত্রী, বাবা-মায়েদের উচিত নেশার নেতিবাচক দিক এবং জীবনের সম্ভাবনাময় বিষয়গুলো তুলে ধরে প্রতিনিয়ত সহমর্মিতামূলক আচরণের মাধ্যমে তাকে চিকিৎসা নিতে আগ্রহী করে তোলা। এমনভাবে আচরণ করতে হবে, যাতে সে বুঝতে পারে, আমরা তাকে ভালোবাসি, তার সুন্দর ও সুস্থ জীবনের জন্য আমরা সহযোগিতা করতে চাই। বেশির ভাগ মাদকাসক্ত হয় পরিবারের বৈরী ও সন্দেহমূলক আচরণের কারণে। মাদকের ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তিকে সঠিকভাবে পরিচর্যা করতে না পারলে যেকোনো সময় তার পূর্বের অবস্থায় ফিরে যাওয়ার প্রবল সম্ভাবনা থাকে। মাদকাসক্তি চিকিৎসায় ব্যক্তির নিজ ও তার পরিবারের সার্বিক সহযোগিতাসহ সেবাপ্রদানকারী সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ভালো করা যেতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রে পরিবারের ভূমিকাই সবচেয়ে বেশি। তবে সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই। আমাদের এই সচেতনতা ও সহযোগিতা যুবসমাজকে যুবশক্তিতে পরিণত করবে।

 

লেখা-

মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন

লেখক, গবেষক ও স্কাউটার

শিক্ষক, বায়তুশ শরফ আদর্শ কামিল (অনার্স-মাস্টার্স) মাদরাসা, চট্টগ্রাম।

 

জেপি/নি-৩০/এমএইচ