আব্দুর রাজ্জাক,বিশেষ প্রতিনিধি:
এবারের ঈদুল ফিতরের পরবর্তী এক সপ্তাহে বেড়েছে বিয়ের সংখ্যা। যেন রমজান মাস শেষের অপেক্ষায় ছিলেন অভিভাবকরা। রমজান মাস শেষ, কেটে গেছে ঈদ। ঈদের পরদিন থেকেই ঘিওরে বিয়ের ধুম পরেছে। এছাড়াও সুন্নতে খাতনা, মুখে ভাতসহ নানা সামাজিক আচার অনুষ্ঠানও ছিল চোখে পড়ার মতো। ঈদকে কেন্দ্র করে আত্মীয়স্বজনকে একসাথে পাওয়ার এই সুযোগে শহর কিংবা গ্রাম, সবখানেই বাজছে বিয়ের সানাই। সম্প্রীতির বন্ধনে এ যেন ঈদকেন্দ্রিক বিয়ে সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে মানিকগঞ্জের ঘিওর।
ঈদের দ্বিতীয় দিন থেকে ঘিওর উপজেলাসহ জেলাজুড়ে যেন বিয়ের ধুম শুরু হয়েছে। ঈদের ছুটি সাথে আরো তিন দিন বাড়িয়ে শুক্রবার পর্যন্ত চলবে এসব বিয়ের আয়োজন। উপজেলার বানিয়াজুরী, বালিয়াখোড়া, নালী, ঘিওর, সিংজুরী,
পয়লা, বড়টিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে শতাধিক বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে বলে
জানা গেছে।
গতকাল শুক্রবার সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলা ও জেলা সদরের পার্লার, ডেকোরেটর প্রতিষ্ঠান আর ফুলসহ বিয়েকেন্দ্রিক সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অতিরিক্ত ভীড়। চলছে বিয়েসাদী, গাঁয়ে হলুদসহ নানা অনুষ্ঠানের সাজ গোঁজ।
ইউনিয়ন ভিত্তিক বিয়ে নিবন্ধনকারী ও জনপ্রতিনিধিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ঈদের পরদিন গত রবিবার থেকে রবিবার (৩০ এপ্রিল) পর্যন্ত বানিয়াজুরী ইউনিয়নে ১২ টি, পয়লায় ৮ টি, সিংজুরীতে ১০ টি, বড়টিয়ায় ৯ টি,
নালী ইউনিয়নে ১০ টি, ঘিওর সদরে ১৪ টি, বালিয়াখোড়া ইউনিয়নে ১১ জোড়া দম্পত্তির শুভকাজ সম্পূর্ণ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এছাড়াও ৭টি ইউনিয়নে কমপক্ষে ১৫ টি হিন্দু সম্প্রদায়ের বিয়ে সম্পূর্ণ হয়।
রুহিদাস পুরোহিত বলেন, লগ্ন ভালো থাকায় এ সময় হিন্দু সম্প্রদায়ের অভিভাবকরা তাদের সন্তানাদীর শুভদৃষ্টি সম্পন্ন করছেন। ঈদের ছুটিতে আত্মীয়স্বজন ও চাকরিজীবীরা এলাকায় অবস্থান করায় অভিভাবকরা এ সময়টিকে বেছে নিয়েছেন।
এ দিকে একসাথে কয়েকটি অনুষ্ঠান থাকায় ঝামেলায় পরেছেন ডেকোরেটর ব্যবসায়ীরা। ঘিওরের বানিয়াজুরী বাজারের ডেকোরেটর ব্যবসায়ী আবুল কাশেম বলেন, ‘আমরা একসাথে দু-তিনটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে পারি। কিন্তু এবার
ঈদের পরদিন থেকে লাগাতার বিয়েসহ অন্যান্য পারিবারিক অনুষ্ঠানের চাপ বেশি। আমার শ্রমীকরাও সবাই কাজে ফিরেনি। তাই পরিচিতজন হলেও অর্ডার না করে দিতে হচ্ছে।
উপজেলার সাহিলী গ্রামের রেখা আক্তার বলেন, মেয়ের বিয়ে উপলক্ষে ডেকোরেটর, মাংসের দোকান ও অন্যান্য সামগ্রী ক্রয় ও যোগাড় করতে হয়েছে বেশি দাম দিয়ে।
উপজেলা সদরের একটি পার্লারের পরিচালক সানজিদা বলেন, ‘ঈদের সময় এমনিতেই সাজসজ্জার কাজ বেশি। তারপরও একাধিক বিয়ের আয়োজন। আমরা হিমশিম খাচ্ছি। গাঁয়ে হলুদের সাজ, বিয়ের কনে এবং আসর সাজাতে পাঁচ দিন যে কীভাবে কেটে গেলা, টের পেলাম না। সন্তানের বিয়ের আয়োজন করা অন্তত ১০ জন অভিভাবক বলেন, বছরের দু’টি ঈদের
ছুটিতে আত্মীয়দের একসাথে পাওয়া যায়। তাই বিয়েসহ বিভিন্ন আয়োজন এ সময়টিকেই বেছ নিয়েছেন তারা।
মণিঋষি পাড়ার দূর্লভ দাস বলেন, বৃহস্পতি ও শুক্রবার এই দুই দিন ছিল আমার মেয়ের বিয়ে। একই দিনে আমাদের পাড়ায় ও আত্নীয় বাড়িতেও একাধিক অনুষ্ঠান থাকায় অনেকেই নিমন্ত্রণে আসতে পারেন নি।
এ দিকে একসাথে একাধিক দাওয়াত রক্ষা করতে গিয়ে বেকায়দায়ও পড়েন অনেকেই। রাথুরা গ্রামের মো: হেলাল উদ্দিন বলেন, একসাথে নিকটাত্মীয়দের তিনটি বিয়ে ও একটি সুন্নতে খাতনা অনুষ্ঠানের দাওয়াত ছিল। কার বাড়িতে যাব, কে খুশি
হবে আর কে বেজার হবে। মুশকিলে পরেছিলাম। পরে পরিবারের সদস্যরা ভাগ হয়ে চার বাড়িতেই দাওয়াত রক্ষা করেছি।
ঘিওর সদরের ইউরোপ প্রবাসী নূরুজ্জামান বলেন, এবার ঈদে দেশে এসেছি মূলত ভাতিজীর বিয়ে ও আমার শ্যালকের ছেলের মুখে ভাত অনুষ্ঠানে যোগ দিতে। সামাজিক অনুষ্ঠানে সময়টা দারুন উপভোগ করছি।
বানিয়াজুরী ইউনিয়নের বিয়ে নিবন্ধনকারী (কাজী) অধ্যক্ষ সাইফুল ইসলাম বলেন, লোকজন সরকারি ছুটিতে ছেলে মেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্য বেছে নিচ্ছেন। ইদের পরদিন থেকে ৫ বিয়ে নিবন্ধন করেছি। তিনি আরো জানান, বিয়ে আরো বেশি
হয়েছে। আমরা শুধু এলাকার মেয়ের বিয়ের নিবন্ধন করি। ছেলেদের নিবন্ধন তার শশুর বাড়ি এলাকার কাজী করান। এছাড়াও অনেক বিয়ে কোর্টে সম্পন্ন হয়।
ঘিওর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান বলেন, ঈদের পর দিন থেকে আগামিকাল শুক্রবার পর্যন্ত ১২ টি দাওয়াত পেয়েছি। প্রতিদিনই একাধিক অনুষ্ঠান। সব জায়গায় সময় মতো উপস্থিত হতে পারিনি। তবে আমার পরিবারের
সদস্যরা সবার বাড়িতে গিয়ে অল্প সময়ের জন্য হলেও দেখা করে আসছে।
জেপি নিউজ ২৪ ডটকম/প্রতিনিধি