মেহেদী হাসান/ শিক্ষার্থী/ যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়:

নির্বাচনের আগে যে পরিমাণ দৌড়ঝাঁপ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ করা গেছে এখন তা কমে তো গেছেই বরং নির্বাচনের পর নিরপেক্ষ ভূমিকায় থাকা এবং সর্বশেষ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তিন সদস্যের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দলের বাংলাদেশ সফরের পর এটা আরও স্পষ্ট হল যে, যুক্তরাষ্ট্র এখন দ্বিধাদ্বন্দ্ব ভুলে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার পক্ষপাতী। প্রতিনিধি দল বিএনপি সহ সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সাথে বৈঠক করলেও আওয়ামী লীগের সাথে এই বৈঠক অত্যন্ত  হৃদ্যতা পূর্ণ সম্পর্ক এবং দু দেশের ভুল বোঝাবুঝি অবসান ঘটিয়ে অংশীদারিত্বের সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার স্পষ্ট বার্তা বহন করে৷

এর অবশ্য অনেক কারণও আছে। ভূরাজনৈতিক কারণে বাংলাদেশ অনেক গুরুত্বপূর্ণ তাছাড়া ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলে খুবই গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে  বাংলাদেশ।  তাই এ অঞ্চলে একটি অবাধ এবং মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল যেমন যুক্তরাষ্ট্র চাই সে চাওয়াতে বাংলাদেশকে অবশ্যই পাশে প্রয়োজন। কিছু কারণে যুক্তরাষ্ট্র এখন চাইছে আওয়ামী লীগের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে। কারণগুলো হল:

১ ভারতের অবস্থান : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই অঞ্চলের নেতৃত্বের একক কর্তৃত্ব  দিতে চায় ভারতকে এবং ভারতের নেতৃত্ব মেনে নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই অঞ্চলে তার পরিকল্পনা সাজাতে চায়। ভারত যেহেতু আওয়ামী লীগের কোন বিকল্প নেই বলে একাধিক বার বলেছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বারবার বাংলাদেশ এর নির্বাচন এর আগের সময়ে নানা ভাগে বলেছে এবং বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগের প্রয়োজনীয়তার কথা অনুভব করছে। তাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও আওয়ামী লীগের কোনো বিকল্প ভাবছে না। তারা আওয়ামী লীগকেই বেছে নিয়েছে।

২. বিরোধী দলগুলির দুর্বলতা: গত দুই বছর ধরে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কাজ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নীতিনির্ধারকদের মধ্যে একটা মৌলিক অবস্থান তৈরি হয়েছে। তা হল তারা দেখছে যে, বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের বিশেষ করে আরও নির্দিষ্ট করে বললে বলা যায়, শেখ হাসিনার কোন বিকল্প নেই। কারণ শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো কোন বিকল্প শক্তির অবস্থান নেই।

৩. সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ মোকাবেলা করা: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম আন্তর্জাতিক এজেন্ডা হল সন্ত্রাস এবং জঙ্গিবাদ মোকাবেলা করা। তারা বাংলাদেশের বাস্তবতায় এটা অনুভব করতে পেরেছে যে, এই মুহূর্তে বাংলাদেশের সরকার পরিবর্তনের মাধ্যমে যদি কোন রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি হয়, তাহলে সেখানে জঙ্গিরা এবং সন্ত্রাসবাদ লালিত হবে। জঙ্গিরা এবং সন্ত্রাসবাদের উত্থান ঘটবে। এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কখনোই চায় না।

৪. চীনকে এই অঞ্চলে নিয়ন্ত্রণ করা: এই অঞ্চলে চীনকে নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে বাংলাদেশকে কাছে নিতেই হবে এর কোন বিকল্প নেই। যদি শেষ পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার বিরোধী অব্যাহত রাখত তাহলে বাংলাদেশ চীন-রাশিয়া-ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের মাধ্যমে তাদের উন্নয়ন পরিকল্পনা এবং উন্নয়ন অভিযাত্রা অব্যাহত রাখত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দেখছে যে, চীনকে প্রতিহত করার জন্য আওয়ামী লীগের সঙ্গে রৈরিতা নয়, বরং আওয়ামী লীগের সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরি করাই উত্তম পথ।

শেষ পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক পদক্ষেপ স্পষ্ট জানান দিচ্ছে তারা আওয়ামী লীগের সাথেই কাজ করতে চাই, আসলে এটা ছাড়া তাদের আর বিকল্প কোন পথ খোলা ছিল না।

জেপি/নি-২৮/প