সুপার এইটের লড়াইয়ে বাংলাদেশ হারিয়ে ইতিহাস রচনা করলো আফগানরা। প্রথমবারের মতো তারা বিশ্বকাপের সেমি ফাইনালে উঠলো। বাংলাদেশকে ৮ রানে হারিয়ে এই অভাবনীয় কৃতিত্ব অর্জন করলো রশিদ খানের দল।
আগে ব্যাট করে ১১৫ রান করেছিল আফগানরা। পরিবর্তিত লক্ষ্যে ১১৪ রানও করতে পারলো না টাইগাররা। ১০৫ রানেই হারের মুখ দেখতে হলো তাদের। বাংলাদেশে এই হারে বিশাল ক্ষতি হয়েছে টিম অস্ট্রেলিয়ার। কারণ এই ম্যাচে বাংলাদেশ সামান্য ব্যবধানে জিতলেই নেট রান রেটের কারণে সেমিতে যেতে পারতো অজিরা। কিন্তু সেটি আর হলো না। বরং সব জল্পনা কল্পনার অবসানা ঘটিয়ে প্রথমবারের মতো সেমিতে উঠে ইতিহাস সৃষ্টি করলো আফগানিস্তান।
টস হেরে বাংলাদেশের হয়ে বোলিংয়ের শুরুটা করেন তানজিম হাসান সাকিব। প্রথম প্রভারে ৩ রান দেন তিনি। পরের ওভারে তাসকিন আহমেদ দেন দুই রান। এই দুজনের করা প্রথম চার ওভারে আসে ২১ রান।
পঞ্চম ওভারে সাকিব আল হাসানকে নিয়ে আসেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। সাফল্যও প্রায় এনে দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তার করা তৃতীয় বলে ইবরাহিম জাদরানের ক্যাচ ছেড়ে দেন তাওহীদ হৃদয়। শট কান্ডারে দাঁড়িয়ে থাকা তার কাছে বল গিয়েছিল বেশ দ্রুত। হাতে জমিয়ে রাখতে পারেননি হৃদয়।
পাওয়ার প্লের ছয় ওভারে ২৭ রান তুলতে পারেন দুই ওপেনার। এরপরও অবশ্য থামেননি তারা। ১০ ওভারে ৫৮ রান তুলে চায়ের বিরতিতে যায় আফগানিস্তান। ফেরার পরই অবশ্য তারা হারিয়ে ফেলে উইকেট। লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেনকে এনেই সফল হন শান্ত।
১৮ বলে ২৯ রান করে রিশাদের বলে তানজিম হাসান সাকিবের হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরত গেছেন ইবরাহিম জাদরানের। অনেকটুকু দৌড়ে এসে ক্যাচ নেন তানজিম। আগে থেকেই চাপে থাকা আফগানিস্তান যেই হারায় উইকেট হারানোর পর।।
ইবরাহিম ফেরার পরের ওভারে এসে মেডেন দেন তাসকিন আহমেদ। রিশাদ নিজের তৃতীয় ওভারে এসে দুটি চার হজম করেন। তবে আরও একবার ম্যাচের মোড় ঘুরে এই লেগ স্পিনারের হাত ধরেই। অবশ্য গুরবাজের সঙ্গে গড়ে উঠা আজমতউল্লাহর জুটি ভাঙেন মোস্তাফিজুর রহমান।
তার বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ নেন লিটন দাস। শুরুতে আম্পায়ার আউট না দিলে রিভিউ নেয় বাংলাদেশ। ১২ বলে ১০ রান করে সাজঘরে ফিরতে হয় আজমতউল্লাহকে। ১৭তম ওভার করতে এসে দুই উইকেট তুলে নেন রিশাদ। দুটিতেই ক্যাচ নেন সৌম্য সরকার।
তার করা অনেক বাইরের বলে তুলে মারতে গিয়ে বাউন্ডারিতে পৌঁছাতে পারেননি গুরবাজ। ৫৫ বলে ৪৩ রান করে আউট হন তিনি। তার করা চতুর্থ বলে দুর্দান্ত ক্যাচ নেন সৌম্য। এবার ৩ বলে ৪ রান করে সাজঘরে ফেরত যান গুলবাদিন নাইব।
পরের ওভারে এসে মোহাম্মদ নবীকেও আউট করেন তাসকিন। এই ওভারে টানা পাঁচটি ডট বল করে শেষটিতে ছক্কা হজম করেন তাসকিন। ১৯তম ওভারে মোস্তাফিজ দেন এক রান। কিন্তু তানজিম সাকিবের করা শেষ ওভারে ১৫ রান নেন রশিদ খান। ইনিংসের শেষে বৃষ্টি এলেও সেটি বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি।
১১৬ রানের লক্ষ্য তাড়ায় প্রথম ওভারেই নাভিন উল হককে চার-ছক্কা হাঁকিয়ে শুরু করেন লিটন দাস। তবে পরের ওভারেই ফজল হক ফারুকিকে উইকেট দিয়েছেন তানজিদ তামিম। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারের তৃতীয় বলটি অফ স্টাম্পের বাইরে গুড লেংথে করেছিলেন ফারুকি। সেখানে ব্যাকফুটে খেলতে গিয়ে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়েন তানজিদ তামিম। ৩ বল খেলেও রানের খাতা খুলতে পারেননি তিনি।
তিনে নেমে সুবিধা করতে পারেননি নাজমুল হোসেন শান্তও। উইকেটে এসেই বড় শট খেলার চেষ্টা করেন এই টপ অর্ডার ব্যাটার। ইনিংসের তৃতীয় ওভারে নাভিনকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ডিপ মিডউইকেটে ধরা পড়েন তিনি। সাজঘরে ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে এসেছে ৫ বলে ৫ রান। পরের বলেই সাকিব আল হাসানকেও ফিরিয়েছেন নাভিন।
চারে নেমে গোল্ডেন ডাক খেয়েছেন এই অভিজ্ঞ ব্যাটার। একাদশে ফেরা সৌম্য ভালো শুরু পেয়েও তা কাজে লাতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত ১০ বল খেলে করেছেন ১০ রান।
তাওহিদ হৃদয় উইকেটে এসে শুরু থেকেই বড় শট খেলার চেষ্টা করেছেন। তবে এদিন বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। রশিদের শিকার হওয়ার আগে ৯ বলে করেছেন ১৪ রান।
মাহমুদউল্লাহ যখন উইকেটে আসেন তখনও বাংলাদেশের সেমির সমীকরণ বাস্তব ছিল। ১৯ বলে যখন ৪৩ রান দরকার তখন দশম ওভারে ৫ বল ডট খেলেন মাহমুদউল্লাহ। সে ওভার থেকে আসে মাত্র ৪ রান। এতেই সেমির স্বপ্ন ম্লান হয় টাইগারদের। পরের ওভারে রশিদের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়েছেন তিনি। ৯ বল খেলে ৬ রান এসেছে তার ব্যাট থেকে। পরের বলেই রিশাদ হোসেনকেও ফেরান রশিদ। এরপর ১৭ ওভার ৫ বলে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ।
তবে আসরের শেষ ম্যাচে এষ রানের মুখ দেখেন লিটন দাস। ৫৪ রানের অপরাজিত ছিলেন তিনি।
জেপি/নি-২৫/প