অবশেষে বাংলাদেশের হাতে ধরা দিলেও বহুল কাঙ্ক্ষিত জয়। শ্রীলঙ্কাকে আগে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়ে মাত্র ১২৪ রানেই থামিয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশি বোলাররা। তবে এই সামান্য লক্ষ্যেও বেশ হিমশিম খেতে হয়েছে টাইগার ব্যাটসম্যানদের। একপর্যায়ে দেখা দিয়েছিল পরাজয়ের সম্ভাবনা। তবে সেই শঙ্কা কাটিয়ে এক ওভার হাতে রেখেই ২ উইকেটে লঙ্কানদের বিপক্ষে বিশ্বকাপে প্রথম জয় ছিনিয়ে নিয়েছে লাল সবুজের প্রতিনিধিরা।

ম্যাচের শুরুতে টসে হেরে আগে ব্যাট করতে নামে শ্রীলঙ্কান। লঙ্কান শিবিরে প্রথম আঘাত হানেন বাংলাদেশি পেসার তাসকিন আহমেদ। দলীয় ২১ রানের মাথায় ওপেনার কুশল মেন্ডিসকে আউট করেন তিনি।

এরপর লঙ্কানদের দ্বিতীয় উইকেট শিকার করেন মোস্তাফিজুর রহমান। মোস্তাফিজুরের বলে ৫ বলে ৪ রান করে আউট কামিন্দু মেনন্ডিস। ৪৭ রান করে মোস্তাফিজুরে জালে ধরা দেন আরেক লঙ্কান ওপেনার পাথুম নিশাঙ্কা।

দলের হয়ে চতুর্থ উইকেট শিকার করেন রিশাদ হোসেন। তার জলে ধরা দেন চারিথ আশারঙ্কা। ২১ বলে ১৯ রান করেন তিনি। তার পরের বলেই আবার চমক দেখান টাইগার লেগস্পিনার নিশাদ। লঙ্কান অধিনায়ক ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গাকে ১ বলেই ফিরিয়ে দেন তিনি। যদিও পরে হ্যাটট্রিক পূরণ করে করতে পারেনি তিনি।

এরপর রিশাদ নিজের তৃতীয় উইকেট তুলে নেন ধনাঞ্জয়া ডি সিলভার মাধ্যমে। ২৬ বলে ২১ রান করেন তিনি। তারপরই তাসকিস তুলে নেন দাসুন শানাকাকে।

মোস্তাফিজুর নিজের তৃতীয় উইকেট শিকার মাহিস থিকসানাকে দিয়ে। তাকে রানের খাতা খুলতেই দেননি এই টাইগার পেসার। তানজিম হাসান সাকিবের জলে ধরা দেওয়া আগে অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউজ করেন ১৯ বলে ১৬ রান। এতে করে ২০ ওভার শেষে লঙ্কানদের সংগ্রহ দাড়ায় ৯ উইকেট হারিয়ে ১২৪ রান।

Screenshot 2024-06-08 112259

১২৫ রান তাড়ায় নেমে তৃতীয় বলেই প্রথম উইকেট হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ। ধনঞ্জয়া ডি সিলভার বলে মিড অনে সহজ ক্যাচ দিয়ে দুই বলে ০ রানে ফেরেন টাইগার ওপেনার সৌম্য সরকার। তিন রান নিতে পারে বাংলাদেশ প্রথম ওভার থেকে। পরের ওভারটিতে গিয়ে হারায় আরও এক উইকেট।

এবার নুয়ান থুসারার বলে ড্রাইভ করতে গিয়ে বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফেরত যান তানজিদ হাসান তামিম। ৬ বলে ৩ রান করেন তিনি। দুই ওপেনারকে হারিয়ে বেশ চাপে পড়া বাংলাদেশকে টেনে তোলার চেষ্টা করেন নাজমুল হোসেন শান্ত ও লিটন

কিন্তু হুট করেই ঘটে নাজমুল হোসেন শান্ত আউট হন। নুয়ান খুসারার বলে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন তিনি। লিটনের সঙ্গে ২২ বলে ২২ রানের জুটি ভেঙে যায় তাতে। পাওয়ার প্লেতে শ্রীলঙ্কার ঠিক বিপরীত অবস্থা হয় বাংলাদেশের। বাউন্ডারি আসে স্রেফ দুটি, ইনিংসের প্রথম বাউন্ডারিই এসেছিল পঞ্চম ওভারে গিয়ে। ছয় ওভারে ৩ উইকেটে বাংলাদেশ করে ৩৪ রান। উইকেট হারিয়ে চাপে পড়া বাংলাদেশের হয়ে এরপর হাল ধরেন তাওহীদ হৃদয়,ও লিটন

তাওহীদ হৃদয় আউট হন ১৫তম ওভারে হাসারাঙ্গার বলে। কিন্তু ওই ওভারের প্রথম তিন বলেই ম্যাচ একদম কাছে নিয়ে আসেন তিনি। হাসারাঙ্গার ওভারে হাঁকান হ্যাটট্রিক ছক্কা! স্লগ সুইপ প্রথম, দ্বিতীয়টিও তাই, তৃতীয় ছক্কা আসে কাভারের উপর দিয়ে। পরের বলে অবশ্য এলবিডব্লিউ হয়ে যান হৃদয়। কিন্তু ততক্ষণে ২০ বলে ১ চার ও ৪ ছক্কায় ৪০ রান করে কাজটা করে দিয়ে গেছেন তিনি।

কিন্তু এরপর বাংলাদেশ আরও একবার পড়ে যায় ভীষণ চাপে। উইকেটে সেট হওয়া লিটন দাসকে ফেরান হাসারাঙ্গা। ৩৮ বলে ৩৬ রান করে তিনি এলবিডব্লিউ হন তিনি। এরপর সাকিব আল হাসানও পাঘিরানার বাউন্সারে মাহেশ থিকসেনার দুর্দান্ত ক্যাচের শিকার হন। ১৪ বলে স্রেফ ৮ রান করেন তিনি।

হুট করেই বদলে যেতে থাকে ম্যাচের মোড। রান খুব বেশি না হলেও, বাংলাদেশ পড়ে যায় চাপে। সেটি যেন পাহাড়সম হয়ে যায় নুয়ান খুসারার করা ১৮তম ওভারে এসে। রিশাদ হোসেন প্রথমে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে বোল্ড হন ৩ বলে ১ রান করে। ঠিক তার পরের বলেই এলবিডব্লিউ হয়ে যান তাসকিন।

শেষ দুই ওভারে ১২ রান দরকার হলেও বাংলাদেশের হাতে তখন কেবল দুই উইকেট। শ্রীলঙ্কার জন্যও অবশ্য পথটা কঠিন ছিল। ১৯তম ওভারে গিয়ে প্রথমবার বোলিংয়ে আসেন দাসুন শানাকা। প্রথম বলেই তার করা ফুলটসে ছক্কা হাঁকিয়ে দেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।

পরের বলে তিনি সিঙ্গেলস নেন। তানজিম হাসান ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দুঢ়তায় ১ ওভার বাকি ম্যাচ থাকতেই ম্যাচ জিতে বাংলাদেশ। ১৩ বলে ১৬ রান করে শেষ অবধি অপরাজিত থাকেন রিয়াদ। অন্যদিকে তানজিম হাসান ৪ বলে ১ রান করে অপরাজিত থাকেন ।

বাংলাদেশের হয়ে তিনটি করে উইকেট সংগ্রহ করেছেন রিশাদ ও মোস্তাফিজুর। দুটি উইকেট শিকার করেছেন তাসকিন এবং ১ টি উইকেট শিকার করেছেন তানজিম হাসান সাকিব।

জেপি/নি-৮/প