ভারতের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বলেছেন, প্রতিবেশী বন্ধু রাষ্ট্র বাংলাদেশ থেকে ডেঙ্গু ছড়াচ্ছে পশ্চিমবঙ্গে। সেক্ষেত্রে ডেঙ্গু আটকাতে সীমান্তে ভারতে আগত বাংলাদেশি পর্যটকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা-নিরীক্ষার দাবি তুললেন তিনি । 

বৃহস্পতিবার রাজ্য বিধানসভায় এ মন্তব্য করেন মমতা। সংবাদ সংস্থা পিটিআই সূত্রে এই খবর জানা গেছে। জানা গেছে রাজ্যের ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন ।

বিধানসভার অধিবেশন থেকে মমতা পরিষ্কার জানিয়ে দেন, ‘বাংলাদেশ থেকেই ডেঙ্গু এরাজ্যে (পশ্চিমবঙ্গ) ছড়াচ্ছে। বাংলাদেশ থেকে ভারতে আসা পর্যটকদের আমি আটকাতে পারব না। কিন্তু সীমান্তে নজরদারি বাড়ানো উচিত। সেই সাথে প্রতিবেশী দেশ থেকে যারা ভারতে প্রবেশ করছে তাদের পরীক্ষা প্রয়োজন।’

একই আশঙ্কা প্রকাশ করে কলকাতা পৌরসভার তরফে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছিলেন ডেপুটি মেয়র তথা পৌরসভার স্বাস্থ্য বিভাগের মেয়র পারিষদ অতীন ঘোষ। কলকাতা পৌরসভা এলাকায় ডেঙ্গুর বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে গত মঙ্গলবার এক পর্যালোচনা বৈঠক হয়।

বৈঠক শেষে অতীন ঘোষ জানিয়েছিলেন, ‘আমাদের পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র বাংলাদেশে ব্যাপক ডেঙ্গু হচ্ছে। ঢাকা সহ বিভিন্ন এলাকা ডেঙ্গুতে জর্জরিত। অনেক মানুষের মৃত্যু হয়েছে, বাংলাদেশের সাথে আমাদের একটা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। সেখানকার মানুষ প্রতিদিন বাসে, ট্রেনে, গাড়িতে এখানে আসছে। মানুষের শরীর হচ্ছে ডেঙ্গু ভাইরাসের ক্যারিয়ার। কোন মানুষ হয়তো ডেঙ্গু নিয়ে এখানে আসছেন। এইরকম একটি লোককে যদি এখানকার এডিস মশা কামড়ায় তাতে এখানকার আরো বেশ কিছু মানুষের মধ্যে সংক্রমিত হবে।

সেই কারণেই আমরা চাইছি যে অভিবাসন পয়েন্টে একটা পরীক্ষা হয়। এদিকে লক্ষ্য রেখে আমাদের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সুব্রত রায় রাজ্য স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে একটা চিঠি দিবেন। যাতে কেন্দ্রীয় সরকার এবং কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য দপ্তরের সাথে কথা বলে ইমিগ্রেশন পয়েন্টে একটা ডেঙ্গু পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়।

উল্লেখ্য,প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশে চলতি বছরে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে ডেঙ্গু। এখনো পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে কয়েক হাজার মানুষ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। দিনকে দিন বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। ফলে হাসপাতাল গুলিতেও রোগীদের রাখার স্থান সংকুলান দেখা দিয়েছে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা ডেঙ্গু সংক্রমণের নিরিখে ২০১৯ সালের ভয়াবহতাকেও নাকি ছাপিয়ে যেতে পারে এবার। ইতোমধ্যে ডেঙ্গু জনিত কারণে দেশটিতে দুই শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে।

এদিকে ডেঙ্গু নিয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা । সংস্থাটি বলছে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে বৃষ্টি ও বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ডেঙ্গুর বিস্তার। বিশ্বের অর্ধেক মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে বলে সতর্ক করেছে ডব্লিউএইচও। গত শুক্রবার (২১ জুলাই) এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এই তথ্য জানায় ডব্লিউএইচও ।

বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার,কন্ট্রোল অব নেগলেক্টেড ট্রপিক্যাল ডিজিজ’ বিভাগের বিশেষজ্ঞ ড. রমন ভেলাইউধান বলেন, ২০০০ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর হাড় বেড়েছে আটগুণ। সারা বিশ্বে বাড়ছে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা। এই মুহূর্তে বিশ্বের জনসংখ্যার অর্ধেকই ডেঙ্গু আক্রান্তের ঝুঁকিতে রয়েছে। এই মুহূর্তে ডেঙ্গু প্রতিহত না করা গেলে ভবিষ্যতে বিশাল আকার ধারণ করবে। সামনে হয়তো ডেঙ্গু কে মহামারি বলে ঘোষণা দেওয়া হতে পারে। তিনি আরও বলেছেন, 'আমাদের হাতে থাকা তথ্য অনুযায়ী ১২৯ দেশের ৫২ লাখ মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত। মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোতে সবচেয়ে বেশি।'  

এ সময় তিনি ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি ব্যবহার করতে পরামর্শ দেন। এই মশা ধ্বংসের সবচেয়ে কার্যকরী উপায় হবে এডিস মশার প্রজনন ক্ষেত্র সম্পূর্ণ ধ্বংস করা। নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া এই মশার বংশ বিস্তারের জন্য সবচেয়ে বেশি উপযোগী।

জেপি/নি-২৮/এসএম