আমার পরিচিত, দায়িত্বশীল বেশ কজন মানুষের ফেসবুকে দেয়া পোস্ট পড়লাম। মধ্যরাত পার হয়ে যাবার পরও তাঁরা প্রচণ্ড গরমে ঘুমাতে পারছেন না, ফ্যানের বাতাস তপ্ততীরের ফলার মত গায়ে বিধছে।
আমি ঢাকা থেকে মাত্র ৪০ মাইল দূরের একটা জেলা শহরে, একতলা একটি ইট-রড-সিমেন্টে বানানো বাসায় থাকি। বেলা তিনটার দিকে আমার শহরের তাপমাত্রা ছিল ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এখন সেটা ২৮ এ নেমেছে। তা নামুক, ৪০ডিগ্রির সময়েও আমি আমার বাসায় ফ্যান চালিয়ে সময় কাটিয়েছি স্বাভাবিক গরমকালের মত করে, মনেই হয়নি বাইরে এতো উত্তাপ। রাতে বৈদ্যুতিক ফ্যান চালিয়ে স্বস্তিতে ঘুমিয়েছি।
প্রশ্ন হচ্ছে দিনের তাপমাত্রা আর রাতের তাপমাত্রা ঢাকা এবং মানিকগঞ্জে প্রায় একই রকম। তাহলে ঢাকার মানুষ রাতের বেলায় প্রচণ্ডগরমে হাঁসফাঁস করছেন কেন? কেনইবা ফ্যানের বাতাস বর্শার তপ্তফলার মত গায়ে বিঁধছে ?
কারণ সোজা। ঢাকা শহরে উন্মুক্ত মাটি নেই। পুরো শহরের ৯৫ভাগ মাটি সিমেন্ট আর পিচে ঢাকা। ঢাকা শহরের ভবন আর রাস্তাগুলো, দিনের প্রখর রৌদ্রতাপ শোষণ করে রাখছে আর রাতে সেই তাপ ধীরে ধীরে ছাড়ছে। এরসাথে যোগ হয়েছে গাড়ি, কারখানার ধোঁয়া।
ঢাকা শহরের কোথাও খোলা মাটি নেই। সিমেন্ট আর পিচে মোড়ানো শহরের পুরো বুক, এরাও দিনে শোষণ করে রাখা তাপ রাতের বেলায় উগরে দিচ্ছে। গাছ নেই, পুকুর, ডোবা নেই, উন্মুক্ত মাটি নেই। দিনেরতাপ ঢাকা শহর শুষে নিতে পারে না। বরং কংক্রিটের লাখ লাখ ভবন, সিমেন্ট আর পিচে মোড়ানো রাস্তা, আঙিনা দিনে ধরে রাখা তাপকে রাতের বেলায় উগ্রে দিতে থাকে, ফলে রাতের ঢাকায় গরমের ভীষণ বিভিষীকা মোটেই কমেনা ।
পক্ষান্তরে মানিকগঞ্জ শহরের খোলা মাটি, গাছপালা, পুকুর, ডোবা দিনের সূর্যতাপকে অনায়াসে শুষে নিতে পারে। দিনের তাপকে রাতে উগরে দেয় না।ঢাকায় বাঁচতে হলে রাস্তা আর ভবনের বাইরের মাটিকে উন্মুক্ত করে দিতে হবে, প্রচুর গাছ লাগিয়ে সবুজ করে ফেলতে হবে। জলাশয় সৃষ্টি করতে হবে।নইলে ঢাকা শহর রাতদিন ইটের ভাটার মত জ্বলতেই থাকবে।
লেখকঃ সাইফুদ্দিন আহমেদ নান্নু,সহকারী অধ্যাপক, লেখক ও সাংবাদিক।