রহিদুল ইসলাম, রাজশাহী :
রাজশাহীতে সাত বছর আগের ঘটনায় ১০ পুলিশ সদস্যসহ ৫২ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছেন জেলা মহিলা দলের এক নেত্রী। মামলায় রাজনৈতিক কারণে বাসায় অভিযানের নামে ভাঙচুর, শারীরিকভাবে নির্যাতন, শ্লীলতাহানি ও মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ তোলা হয়েছে।
সোমবার রাজশাহী মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-১ -এ মামলাটি করেন রাজশাহীর জেলা মহিলা দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সম্পাদক লাইলা সুলতানা লিজা।
মামলার বাদীর আইনজীবী মাহমুদুর রহমান বলেন, আদালতের বিচারক মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) নির্দেশ দিয়েছেন। মামলার পরবর্তী শুনানির তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে আগামী বছরের ১৭ মার্চ।
মামলায় যে ১০ পুলিশ সদস্যকে আসামি করা হয়েছে, তাঁরা হলেন নগরের বোয়ালিয়া থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহাদত হোসেন, তৎকালীন পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) সেলিম বাদশা, উপপরিদর্শক (এসআই) নজরুল ইসলাম, মো. শাহিন, বোসপাড়া পুলিশ ফাঁড়ির তৎকালীন ইনচার্জ মো. মনির, কনস্টেবল হৃদয় কুমার, আনোয়ার, আফাজ, সাবিনা ও রুমিনা। মামলার অন্য ৪২ আসামির মধ্যে সিটি করপোরেশনের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মো. টুলুর নাম রয়েছে।
মামলার আরজিতে বলা হয়, মামলার বাদী দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। বিগত সময়ে তাঁর রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে আসামিরা তাঁকে বিভিন্নভাবে হেনস্তা ও নাজেহাল করার চেষ্টা করতেন। বোয়ালিয়া থানার তৎকালীন ওসি ও পরিদর্শক তাঁকে বিভিন্ন সময়ে মিথ্যা মামলায় জড়ানোর জন্য এবং ক্রসফায়ারে দিয়ে হত্যার হুমকি দিতেন। এতে আতঙ্কিত হয়ে লাইলা সুলতানা ২০১৭ সালের ১ ফেব্রুয়ারি বোয়ালিয়া থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে যান। তখন ওসি শাহাদত হোসেন জিডি না নিয়ে তাঁকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন।
মামলার আরজিতে আরও বলা হয়, এ ঘটনার জেরে ৩ ফেব্রুয়ারি বিকেলে তৎকালীন ওসিসহ ১০ পুলিশ সদস্য লাইলা সুলতানার পৈতৃক বাড়িতে গিয়ে তাঁকে টানাহেঁচড়া করে বাড়ির বাইরে নিয়ে আসেন। অন্য আসামিরা বাড়িটে ভাঙচুর করতে থাকেন। তৎকালীন ওসি শাহাদত লাঠি দিয়ে লাইলার মাথায় আঘাত করলে গুরুতর জখম হয়। এতে তাঁর মাথায় পাঁচটি সেলাই দিতে হয়। পুলিশ পরিদর্শক সেলিম বাদশা লাঠি দিয়ে লাইলার শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলোপাতাড়ি মারধর করেন। আসামি মনির তাঁকে টানাহেঁচড়া করে শ্লীলতাহানি করেন।
এ সময় লাইলার বোন শামীমা সুলতানা তাঁকে রক্ষার জন্য এগিয়ে গেলে পুলিশ সদস্যরা তাঁকেও মারধর করেন। প্রায় ৩০-৪০ মিনিট ধরে অন্য আসামিরা লাইলার বাড়িতে ভাঙচুর চালান। এতে প্রায় চার লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়। ঘটনার পর লাইলাকে পুলিশের পিকআপভ্যানে করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরদিন হাসপাতাল থেকে তাঁকে বোয়ালিয়া থানায় নিয়ে যাওয়া হয় এবং তাঁর বিরুদ্ধে একটি মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়।
মামলার আরজিতে আরো বলা হয়েছে, তৎকালীন ওসি শাহাদত হোসেন ক্ষমতার অপব্যবহার করে অন্য আসামিদের সঙ্গে নিয়ে লাইলাকে হত্যার চেষ্টা করেছেন ও তাঁর বাড়ি ভাঙচুর করেছেন। ওই সময় হাসপাতালে চিকিৎসা নিলেও আসামিরা তাঁর চিকিৎসার কাগজপত্রও তাকে দেননি। পরে লাইলা জামিন পেলে আসামিরা আবারও নানাভাবে হুমকি দেন। রাজনৈতিক প্রতিকূল পরিবেশ থাকায় আসামিদের ভয়ে এত দিন মামলা করতে পারেননি লাইলা।
লাইলা সুলতানার বিরুদ্ধে করা একটি মাদকের মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বোয়ালিয়া থানার তৎকালীন এসআই মো. শাহিন। তিনি বর্তমানে রাজশাহী নগরের এয়ারপোর্ট থানার ওসি।
মো. শাহিন বলেন, ঘটনার দিন লাইলাকে তার এলাকার জনগণ মাদকসহ আটক করেছিল। জনগণের হামলায় তিনি আহত হয়েছিলেন। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে তাঁকে জনতার হাত থেকে উদ্ধার করে মাদকসহ চালান দিয়েছিল।
তিনি আরও বলেন, ২০০৮ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত তার (লাইলা) নামে মাদকের সাতটি মামলা হয়েছে। তিনি আসলে একজন মাদক ব্যবসায়ী। এখন তিনি মামলা করতেই পারেন। তবে মামলায় পুলিশ ছাড়া অন্য যাঁদের নাম আছে, তারাই সেদিন তাকে মাদকসহ আটক করেছিলেন।
জেপি/নি-৩১/এমএইচ