আব্দুর রাজ্জাক,বিশেষ প্রতিনিধি:

বৈশাখের আকাশে গনগনে সূর্য।কাঠফাটা রোদ্দুরে তপ্ত বাতাস। থেমে নেই  রুক্ষ প্রকৃতির রূপ বিন্যাশ। সতেজতার পূর্ণতা নিয়ে পথে-প্রান্তরে কৃষ্ণচূড়ার লাল আভা আবির্ভূত হয়েছে সৌন্দর্যের নতুন রূপে।

‘কৃষ্ণচূড়ার রাঙা মঞ্জুরি কর্ণে - আমি ভুবন ভুলাতে আসি গন্ধে ও বর্ণে’ কবি কাজী নজরুল ইসলামের এই মনোমুগ্ধকর গান আমাদের স্মরণ করে দেয় কৃষ্ণচূড়ার তাৎপর্য।

ঘিওর উপজেলা সহ মানিকগঞ্জ জেলার পথে প্রান্তরে যেন লাল রঙে পসরা সাজিয়ে বসে আছে কৃষ্ণচূড়া। উপজেলার ঘিওর, বানিয়াজুরী, নালী, সিংজুরী, পয়লা, বালিয়াখোড়া, বড়টিয়া ইউনিয়নের প্রত্যন্ত মেঠো পথ, ঝোপে , বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আঙ্গিনায় একসময় এ গাছের অনেক দেখা মিলত। কিন্তু গত এক দশকে কৃষ্ণচূড়া গাছের সংখ্যা কমে এসেছে। স্থানীয় লোকজন জানান, কৃষ্ণচূড়া শুধু ফুলের সৌন্দর্য । এর কাঠ তেমন কোন কাজে আসে না। তাই মানুষের কৃষ্ণচূড়া গাছ রোপনে আগ্রহ অনেক কম। 

তবে ইদানিং বাণিজ্যিক ভিত্তিক ও শখের বসে কৃষ্ণচূড়া গাছের চারা রোপণ করছেন অনেকেই। বানিয়াজুরী রিফাত নার্সারির মালিক আব্দুর রশিদ জানান, গত তিন চার বছর যাবত কাটিং কলঙ্কিত কৃষ্ণচূড়ার চারা বিক্রি বেড়েছে প্রতিটি চারা ২শ থেকে ৫শ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।

কৃষ্ণচূড়া সৌন্দর্য থমকে দাঁড়ায় পথচারীরা, যে কারো চোখে এনে দেয় শিল্পের দ্যোতনা। দূর থেকে দেখলে মনে হয়, বৈশাখের রৈদ্দুরের সবটুকু উত্তাপ গায়ে মেখে নিয়েছে রক্তিম পুষ্পরাজি; সবুজ চিরল পাতার মাঝে যেন আগুন জ্বলছে।

কৃষ্ণচূড়া গাছের আরেক নাম যে গুলমোহর তা কম লোকই জানেন, কিন্তু কৃষ্ণচূড়াকে চেনেন না এমন লোক খুঁজে পাওয়া ভার।

বাংলাদেশ ন্যাশনাল হারবেরিয়ামের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মাহবুবা সুলতানা জানান, কৃষ্ণচূড়ার আদি নিবাস পূর্ব আফ্রিকার মাদাগাস্কার। এই বৃক্ষ শুষ্ক ও লবণাক্ত অবস্থা সহ্য করতে পারে। ক্যারাবিয়ান অঞ্চল, আফ্রিকা,  বাংলাদেশ, ভারতসহ বিশ্বের অনেক দেশে এটি জন্মে থাকে। বৈজ্ঞানিক নাম উবষড়হরী ৎবমরধ। এটি ঋধনধপবধব পরিবারের অন্তর্গত একটি বৃক্ষ।

সৌন্দর্যবর্ধক গুণ ছাড়াও, এই গাছ উষ্ণ আবহাওয়ায় ছায়া দিতে বিশেষভাবে উপযুক্ত। কৃষ্ণচূড়া উদ্ভিদ উচ্চতায় সাধারনত ১২/১৫ মিটার হলেও শাখা-পল্লবে এটির ব্যাপ্তি বেশ প্রশ্বস্ত।  মুকুল ধরার কিছু দিনের মধ্যে পুরো গাছ ফুলে ফুলে ভরে যায়। কৃষ্ণচূড়ার ফুলগুলো বড় ৭/৮টি পাপড়িযুক্ত গাঢ় লাল। পাপড়িগুলো প্রায় ৮ সেন্টিমিটারের মতো লম্বা হতে পারে। 

 কৃষ্ণচূড়া তিনটি রঙের হয়। লাল, হলুদ ও সাদা। কম হলেও চোখে পড়ে হলদে রঙের কৃষ্ণচূড়া আর সাদা রঙের কৃষ্ণচূড়ার দেখা মেলে কালেভদ্রে।

এর নাম নিয়ে স্থানীয় অনেকেরই ধারণা, রাধা ও কৃষ্ণের সঙ্গে নাম মিলিয়ে এ বৃক্ষের নাম হয়েছে কৃষ্ণচূড়া। এর বড় খ্যাতি হলো গ্রীষ্মের প্রচন্ড।  তাপদাহে যখন এই ফুল ফুটে তখন এর রূপে মুগ্ধ হয়ে পথচারীরাও থমকে তাকাতে বাধ্য হন।  

পরিবেশ ও প্রকৃতি বিষয়ক গবেষণাধর্মী প্রতিষ্ঠান “বারসিক” এর আঞ্চলিক কর্মকর্তা বিমল রায় জানান, বাংলা সাহিত্য, সংস্কৃতি আর অনেক বহু আন্দোলনের পটভূমির সাথে কৃষ্ণচুড়া গাছের সম্পর্ক খুব নিবিড়। ছড়া-কবিতা-গানে উপমা হিসাবে নানা ভঙ্গিমায় এসেছে এই ফুলের সৌন্দর্য্য বর্ণনা। 

অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ও কবি দোলা রায় বলেন, শখের বশে এ গাছের কদর থাকলেও; এর কাঠ তুলনা মূলক দামী না হওয়া এবং ভালো কোন ব্যবহারে না আসায় বাণিজ্যিকভাবে এ গাছ বপনে আগ্রহ অনেক কম। 

জেপি নিউজ ২৪ ডটকম/প্রতিনিধি/