রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালের কেবিনে চিকিৎসাধীন দুর্নীতির মামলায় দশ বছরের দণ্ডপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য হাজী মোহাম্মদ সেলিম জামিনে মুক্তি পেয়েছেন।

মঙ্গলবার (১৭ জানুয়ারি) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ডেপুটি জেলার সেলিম।

এর আগে দুপুর ১টায় সেলিমের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় কারাগারের একটি টিম হাজী সেলিমের জামিনের কাগজপত্র নিয়ে বিএসএমএমইউতে প্রবেশ করেন। পরে বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষের কাছে তাকে বুঝিয়ে দেন। তাৎক্ষণিকভাবেই সরিয়ে নেওয়া হয় কারা পুলিশের নিরাপত্তা।

তবে এখনো হাসপাতাল ছাড়েননি হাজী সেলিম। তিনি বিএসএমএমইউর ৬১১ নম্বর কেবিনে চিকিৎসাধীন আছেন। গত ৬ ডিসেম্বর দুর্নীতির মামলায় ১০ বছরের দণ্ডপ্রাপ্ত সংসদ সদস্য হাজী মোহাম্মদ সেলিমকে জামিন দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। একইসঙ্গে ১০ বছর দণ্ডের বিরুদ্ধে হাজী সেলিমকে আপিলের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বে আপিল বিভাগ বেঞ্চ আজ এ আদেশ দেন। আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন সিনিয়র অ্যাডভোকেট সাঈদ আহমেদ রাজা। দুদকের পক্ষে সিনিয়র অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান।

হাজী সেলিমের বিরুদ্ধে লালবাগ থানায় অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০০৭ সালের ২৪ অক্টোবর মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ মামলায় ২০০৮ সালের ২৭ এপ্রিল তাকে দুই ধারায় ১৩ বছরের কারাদণ্ড দেন বিচারিক আদালত। ২০০৯ সালের ২৫ অক্টোবর এ রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন হাজী সেলিম। ২০১১ সালের ২ জানুয়ারি হাইকোর্ট এক রায়ে তার সাজা বাতিল করেন। পরবর্তী সময়ে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে দুদক। ওই আপিলের শুনানি শেষে ২০১৫ সালের ১২ জানুয়ারি হাইকোর্টের রায় বাতিল করে পুনরায় শুনানির নির্দেশ দেন আপিল বিভাগ।

ফের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট রায় দেন। রায়ে ১০ বছরের দণ্ড বহাল থাকলেও তিন বছরের সাজা থেকে খালাস পান হাজী সেলিম। একইসঙ্গে রায় পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে তাকে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়।

চলতি বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি এ রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হয়। রায়ে ৩০ দিনের মধ্যে তাকে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়। এ সময়ের মধ্যে আত্মসমর্পণ না করলে তাঁর জামিন বাতিল করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। ২২ মে হাইকোর্টের রায় অনুসারে আত্মসমর্পণ করার পর ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৭ তার জামিন নামঞ্জুর করেন। এ সময় আসামিপক্ষের আইনজীবীরা তাঁকে কারাগারে ডিভিশন ও সুচিকিৎসার আবেদন জানান। বিচারক কারাবিধি অনুযায়ী জেল কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। ২৪ মে আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় দণ্ডের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করেন। একইসঙ্গে জামিন আবেদনও করেছিলেন হাজী সেলিম।

হাইকোর্ট রায়ে যে ধারায় হাজী সেলিম খালাস পেয়েছেন তার বিরুদ্ধে আপিল করেছে দুদক। এখন হাজী সেলিম ও দুদকের আপিলের ওপর শুনানি হবে। উভয়পক্ষে আপিলের সারসংক্ষেপ দাখিল করতে হবে।