logo
আপডেট : 30, September 2024 16:46
ইবি উপাচার্যের নিকট শিক্ষার্থীদের ৪৬ সংস্কার প্রস্তাবনা

ইবি উপাচার্যের নিকট শিক্ষার্থীদের ৪৬ সংস্কার প্রস্তাবনা

প্রতিনিধি, ইবি:

শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতকরণে উপাচার্যের নিকট ৪৬ টি সংস্কার ভাবনা প্রস্তাব করেছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থীরা। সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) উপাচার্যের সাথে শিক্ষার্থীদের এক মত বিনিময় সভায় ইবি বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন এসব সংস্কার ভাবনা প্রস্তাব করেন।

শিক্ষার্থীদের প্রস্তাবিত ৪৬ টি সংস্কার ভাবনা-

ক্যাম্পাসে দলীয় লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র ও শিক্ষক রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিতে হবে, শিক্ষাকার্যক্রম ও প্রশাসন পরিচালনায় লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (এল এম এস) এর মত অত্যাধুনিক পদ্ধতি প্রচলন করতে হবে, সেশনজটের শিকার সকল বিভাগে সেশনজট নিরসনের দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিতে হবে, শিক্ষার্থীদের একটি অভিন্ন পরিচয়পত্রের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল প্রকার কার্যাবলী সম্পন্ন করতে হবে, প্রশাসনিক ভবনের সেবার মান দ্রুততম সময়ের ভিতরে আধুনিকীকরণ ও কাজের প্রতি অবহেলা নিরসন করতে হবে, পাশাপাশি,  অনলাইন পেমেন্ট প্রক্রিয়া সচল করতে হবে, শিক্ষার্থীদের জন্য প্রয়োজনের ভিত্তিতে  স্কলারশিপ নিশ্চিত করতে হবে, শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার জন্য প্রস্তুত করার লক্ষ্যে সিলেবাসে গবেষণা অন্তর্ভুক্তি এবং গবেষণা সুবিধা বৃদ্ধি করতে হবে, প্রতি বিভাগে মানসম্মত ইংরেজি শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে, বিভিন্ন বিভাগে বাস্তব ও কর্মসংস্থানমুখী কোর্স অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনায় একাডেমিক ক্যালেন্ডার অনুসরণ বাধ্যতামূলক করতে হবে, সকল বিভাগের ক্লাস, পরীক্ষা ও রেজাল্ট একই সাথে হতে হবে, শিক্ষকদেরকে রুটিন অনুযায়ী নিয়মিত ক্লাস নেওয়া বাধ্যতামূলক করতে হবে, পরীক্ষার ৭ দিন পূর্বেই টিউটোরিয়াল ও ক্লাস উপস্থিতির নম্বর নোটিশ বোর্ডে ঝুলিয়ে দিতে হবে, পরীক্ষার খাতা চ্যালেঞ্জ করার সুযোগ রাখতে নীতি প্রণয়ন করতে হবে। উন্নত দেশের ন্যায় শিক্ষার্থী কর্তৃক শিক্ষকবৃন্দ গোপনীয়তার সাথে মূল্যায়িত হবেন এবং এই মূল্যায়ন ফলের ভিত্তিতে রেটিং প্রকাশ করতে হবে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগে মেধা ও যোগ্যতাকে প্রাধান্য দিতে হবে, শারীরিক প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য প্রয়োজনীয় সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি সপ্তাহে সাতদিন রাত ১২ টা পর্যন্ত খোলা রেখে প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে হবে, বই ইস্যু সংক্রান্ত জটিলতা নিরসন করতে হবে, নিজস্ব বই নিয়ে অধ্যয়নের জন্য প্রয়োজনীয় পরিসর নিশ্চিত করতে হবে, একই সাথে সব হলের রিডিং রুম আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণ করতে হবে, জুলাই বিপ্লবে বিভিন্ন ভাবে শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিকভাবে হামলাকারী ছাত্রলীগ নেতা-কর্মী ও তাদের দোসরদের চিহ্নিত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে মামলা দায়ের করতে হবে, গত পনেরো বছরে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ ও তাদের দোসরদের নির্যাতন ও মিথ্যা মামলার শিকার সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করতে হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়কে পূর্ণাঙ্গ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত করার রোডম্যাপ প্রকাশ ও বাস্তবায়নের পূর্ব পর্যন্ত মেধার ভিত্তিতে সিট প্রদান নিশ্চিত করতে হবে, আবাসিকতা নিশ্চিত করতে না পারলে নতুন কোন বিভাগ চালু করা যাবে না, আবাসন সংকট নিরসনে দ্রুততম সময়ে শিক্ষার্থীদের জন্য আরো নতুন হল নির্মাণ করতে হবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীদের জন্য সব বিভাগে কমন রুমের সংখ্যা ও সুবিধা বৃদ্ধি করতে হবে, দীর্ঘদিন অবহেলার স্বীকার বেগম খালেদা জিয়া হলের বিদ্যুৎ সমস্যা সমাধান সহ সকল সংস্কার কাজ দ্রুততম সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন করতে হবে, হল প্রভোস্ট ও হাউস টিউটরদের ক্যাম্পাসে অবস্থান ও নিয়মিত অফিস করতে হবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন করে গেস্টরুম ও গণরুম প্রথা চিরতরে বিলুপ্ত করতে হবে, হল ডাইনিং এর পরিচ্ছন্নতা, খাবারের পুষ্টি ও গুণগত মান নিশ্চিত করতে হবে। প্রয়োজনে ভর্তুকি বৃদ্ধি করতে হবে।

সকল হলের ইন্টারনেট সুবিধার মান বৃদ্ধি সহ ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরীণ সর্বক্ষেত্রে মান সম্মত ইন্টারনেট সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়াইফাই, আইসিটি সেবা ও ওয়েবসাইটের মান উন্নয়নে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং প্রত্যেক সেমিস্টারের ফলাফল বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েব সাইটে প্রকাশ করতে হবে, সকল শিক্ষার্থীর জন্য  বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসিয়াল ইমেইল প্রদান করতে হবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল স্টেকহোল্ডারদের জন্য তথ্যের অবাধ প্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কাফেটেরিয়া চালু করে খাবারের গুণগত মান নিশ্চিত করতে হবে এবং প্রয়োজনে ভর্তুকি প্রদান করতে হবে, নিরাপদ ক্যাম্পাস নিশ্চিত করার স্বার্থে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে অনুমোদন ব্যতীত সব ধরনের যানবাহনের  চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের নির্মাণ কাজ দ্রুততম সময়ের ভিতরে শেষ করতে হবে, ক্যাম্পাসে বিনা অনুমতিতে  বহিরাগত প্রবেশ নিষিদ্ধ করতে হবে, ক্যাম্পাসে কর্মরত বহিরাগত ব্যক্তিদের জন্য পৃথক আইডি কার্ডের ব্যবস্থা করতে হবে, ক্যাম্পাসকে মাদক এবং র‌্যাগিং মুক্ত করতে হবে, ক্যাম্পাসে পর্যাপ্ত ডাস্টবিন নিশ্চিত এবং নোংরা আবর্জনা মুক্ত করে সবুজায়ন করতে হবে, ক্যাম্পাসে টয়লেট সমূহ রুটিন মাফিক পরিচ্ছন্ন করতে হবে, পরিষ্কার করার পরে দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের সই নিতে হবে।

দায়িত্বরত চিকিৎসকদের রুটিন অনুযায়ী দায়িত্ব পালন ও দক্ষ কর্মচারী নিশ্চিত করতে হবে, শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকল্পে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টার আধুনিকায়ন ও হলে হলে স্বাস্থ্য সহকারী নিয়োগ ও ডিসপেনসারি স্থাপন করতে হবে, বিশেষায়িত ডাক্তারদের সপ্তাহের ৫ কার্য দিবসের অন্তত দুই দিন (দিনের বেলা) চিকিৎসা সেবা প্রদান করতে হবে।

টিএসসিতে সকল সাংস্কৃতিক কার্যক্রম সচল রাখার প্রয়োজনে অফিস রুম বাদে সকল রুম খোলা রাখতে হবে, বিশ্বমানের জনশক্তি তৈরি করতে শিক্ষাক্রম এর পাশাপাশি অন্যান্য কোর্স (যেমন: বেসিক কম্পিউটার, ফ্রিল্যান্সিং) চালু করা, কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে ক্যাম্পাসে নিয়মিত জব ফেয়ার আয়োজন করতে হবে, জিমনেসিয়ামে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম নিশ্চিত এবং সপ্তাহে ৭ দিন ছাত্র ও ছাত্রীদের জন্য শিডিউল মোতাবেক খোলা রাখতে হবে, বাৎসরিক ক্রীড়া আয়োজন ও প্রত্যেক বিভাগকে বাৎসরিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে, বিশ্ববিদ্যালয়ের পুকুর ও লেক সংস্কার করতে হবে এবং সুইমিং পুল নির্মাণ নিশ্চিত করতে হবে।

পরিবহন সেবার শৃঙ্খলা ও গুণগত পরিবর্তন করতে হবে। পরিবহনে বহিরাগতদের আরোহণ  পুরোপুরি বন্ধ করতে হবে, পরিবহন সার্ভিসের জন্য আলাদা অ্যাপস তৈরি করতে হবে অথবা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাপসের ভেতরে পরিবহনকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিসে ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু করতে হবে, এই অফিসে ইতিপূর্বে শিক্ষার্থীদের সাথে দুর্ব্যবহারকারী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে, প্রয়োজনীয় ক্লাসরুম নিশ্চিত না করে নতুন বিভাগ চালু করা যাবে না। এবং চালুকৃত বিভাগসমূহের জন্য পর্যাপ্ত ক্লাসরুম নিশ্চিত করতে হবে, ল্যাব এবং রিসার্চ সংক্রান্ত পর্যাপ্ত বাজেট নিশ্চিত করতে হবে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও বিভাগ গুলোর আর্থিক স্বচ্ছতা নিশ্চিত ও জবাবদিহি বৃদ্ধিতে প্রশাসনিক এবং অ্যাকাডেমিক প্রতিটি সভায় শিক্ষার্থী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে হবে।

মতবিনিময় সভায় উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় একটি স্পেশালাইজড বিশ্ববিদ্যালয়। এটি অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আলাদা। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল লক্ষ্য হচ্ছে আধুনিক শিক্ষার সঙ্গে ইসলামী শিক্ষার সমন্বয় সাধন করা। আধুনিক শিক্ষাকে বাদ দিয়ে যেমন জাগতিক জীবনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা যাবে না, তদ্রূপ ইসলামী শিক্ষার উন্নয়ন না ঘটালে সুন্দর সমাজ গঠনের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য পূরণ হবে না। এজন্য আমার মূল কাজ শিক্ষা সংস্কার।

সভায় উপাচার্য বলেন, আমার মূল কাজ হবে শিক্ষার সংস্কার করা। আজকের নতুন বাংলাদেশ আর পেছনে ফিরে যাবে না। দেশের প্রতিটি অঙ্গন হবে দুর্নীতিমুক্ত। আমরা সবাইকে নিয়েই দেশ সংস্কারের মাধ্যমে শহীদদের রক্তের মূল্য দিতে চায়। আমি আইন অনুসারে সব কাজ করবো। আইন মেনে কাজ করলে কোথাও কোনো ধরনের বৈষম্য থাকবে না। আমি আপনাদের সকল প্রস্তাব পূরণে কাজ করবো। দায়িত্ব যখন নিয়েছি আমি আমার দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট থাকবো।

উপাচার্য আরো বলেন, আমি তোমাদের উপাচার্য, আমি প্রতিদিন তোমাদের মুখ দেখতে চাই। আমি আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয় সমূহের মডেলকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুসরণ করার চেষ্টা করবো। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশ্য ছিল একটি আন্তর্জাতিক মানের বিশ্ববিদ্যালয়। এই ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার জন্য সকলকে নিয়ে আমি নিরলস চেষ্টা করবো এই প্রতিজ্ঞা করছি।

জেপি/নি-৩০/প