মোহাম্মদ সিরাজুল মনির, চট্টগ্রাম:
খুব সীমিত সময়ের মধ্যে বাজার টালমাটাল করে সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেট শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। একদিনের ব্যবধানে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ১০০ টাকার বেশি বাড়িয়ে দিয়ে ডাবল সেঞ্চুরি পার করেছে।
গত শুক্রবার পেঁয়াজের কেজি ১২০ টাকা থাকলেও শনিবার থেকে ২২০ থেকে ২৪০ টাকায় গিয়ে ঠেকে। একদিনে কেজিতে ১০০ টাকার বেশি মূল্য বৃদ্ধির ঘটনাকে নজিরবিহীন আখ্যায়িত করা হয়েছে। এদিকে পেঁয়াজের সংকট তৈরির সাথে জড়িতদের খুঁজে বের করে আইনের মুখোমুখি করা হবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক। গতকাল বিকাল থেকে চট্টগ্রামের নব্বই শতাংশ দোকান পেঁয়াজ বিক্রি বন্ধ করে দেয়। ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দেওয়ার পর থেকে বাজারের এ অবস্থা। পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে গোয়েন্দা তৎপরতার পাশাপাশি জেলা প্রশাসনও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া শুরু করেছে। ব্যবসায়ী ও ভোক্তারা বিকল্প বাজার খোঁজার পরামর্শ দিয়েছেন। মিয়ানমার, মিশর ও চীনে পেঁয়াজের বড় যোগান রয়েছে। এ রকম হলে বাজার নিয়ন্ত্রণে আসবে আশা তাদের।
জানা যায়, দেশে বর্তমানে বছরে প্রায় ৫০ লাখ টন পেঁয়াজের চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে রোজা ও কোরবানের ঈদকে সামনে রেখে পেঁয়াজের ব্যবহার কিছুটা বাড়লেও বছরের অন্যান্য সময় প্রতি মাসে গড়ে ৩ থেকে সাড়ে তিন লাখ টন পেঁয়াজ লাগে। দেশে বছরে প্রায় ৩০ লাখ টন পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। বাকি পেঁয়াজ ভারত থেকে আমদানি করে চাহিদার যোগান দেয়া হয়।
বাংলাদেশের পেঁয়াজ আমদানি প্রায় পুরোপুরি ভারত থেকে হয় বলে উল্লেখ করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেছেন, ভারতে বন্যায় পেঁয়াজের ফলন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাই নিজেদের বাজারে যাতে সংকট তৈরি না হয় সেজন্য আগামী মার্চ মাস পর্যন্ত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে। তাদের ঘোষণার সাথে সাথেই দেশে পেঁয়াজের ঝাঁজ ঘণ্টায় ঘণ্টায় বাড়তে শুরু করে। ভারত থেকে বাড়তি দামের পেঁয়াজ আসার আগেই চাক্তাই–খাতুনগঞ্জ এবং বড় বড় বাজারগুলোর আড়তে থাকা পেঁয়াজ নিয়ে কোটি কোটি টাকার ব্যবসা চলে।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র বলেছে, দেশে এখনো পেঁয়াজের সংকট হওয়ার মতো পরিস্থিতি হয়নি। ইতোপূর্বে আমদানিকৃত এবং দেশে উৎপাদিত বিশাল মজুদ বিভিন্ন গুদামে রয়েছে। অথচ বাজার অস্থির করে সংঘবদ্ধ চক্র ভোক্তাদের পকেট কাটছে। এভাবে মূল্যবৃদ্ধি এবং বাজার থেকে পেঁয়াজ উধাও হওয়ার ব্যাপারটিকে অস্বাভাবিক এবং কারসাজি বলে আখ্যায়িত করে সূত্রগুলো বলেছে, পেঁয়াজের বাজার নিয়ে কারসাজির পেছনে বাংলাদেশের বড় বড় কয়েকজন ব্যবসায়ী জড়িত। তারা ভারতীয় পেঁয়াজ নিয়ে রাতারাতি টাকার পাহাড় গড়ছে। পেঁয়াজ দ্রুত পচনশীল পণ্য। এর দীর্ঘ মেয়াদি মজুদ সম্ভব নয়। গুদামে থাকা পেঁয়াজগুলো বাজারে আনতে ব্যবসায়ীরা বাধ্য হবেন। তারা ভোক্তাদের হুড়োহুড়ি না করে অল্প অল্প করে পেঁয়াজ কিনে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন।
দেশের উত্তরাঞ্চলে প্রচুর পেঁয়াজ হয়। পাবনা, ইশ্বরদী ও রাজশাহী মোকাম থেকে প্রচুর দেশি পেঁয়াজ সারা দেশে সরবরাহ হয়। দেশি পেঁয়াজের মজুদ কমে আসায় সংঘবদ্ধ চক্রটি অন্য বছরের মতো এবারও পেঁয়াজ নিয়ে কারসাজি শুরু করে। তবে এবার অতীতের সব রেকর্ড ভেঙেছে।
পেঁয়াজের ব্যাপারে জেলা প্রশাসন কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান। তিনি বলেন, আমরা গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করছি।শনিবার দুজন ম্যাজিস্ট্রেট ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেছেন। আরো কয়েকজন ম্যাজিস্ট্রেট বিভিন্ন বাজারে অভিযান পরিচালনা করবেন। পেঁয়াজের সংকট তৈরির সাথে জড়িতদের খুঁজে বের করে আইনের মুখোমুখি করা হবে জানান তিনি।
জেপি/নি-১০/প