প্রতিনিধি, রাজশাহী:

রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি প্রকৌশলী এনামুল হকের নির্মান করা প্রতিষ্ঠান এনা প্রোপার্টিজ। সেই ভবনটিকে কার্যালয় করতে জেলা ও মহানগর বিএনপি ‘ভাড়া’ নিচ্ছে। ইতোমধ্যে ভবনটির সামনে জেলা এবং মহানগর বিএনপির একটি সাইনবোর্ডও টাঙানো হয়েছে। ভবনটি ব্যবহার উপযোগী করতে পুরোদমে শুরু হয়েছে সাজসজ্জার কাজ।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী মহানগরীর সোনাদিঘির পারে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) ভিত্তিতে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) সঙ্গে একটি বহুতল বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ করেছে এনা প্রোপার্টিজ। ভবনটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘সিটি সেন্টার’। রাসিক এই জায়গাটির মালিক। এই সিটি সেন্টারের পেছনেই এনা প্রোপার্টিজ। কর্মচারীদের থাকা এবং বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম রাখার জন্য এরপর সেখানে একটি দোতলা ভবন নির্মাণ করা হয়। এখন এই ভবনের দোতলায় জেলা ও মহানগর বিএনপির প্রধান কার্যালয় লেখা সাইনবোর্ড দেওয়া হয়েছে। এই ভবনটির দক্ষিণ অংশে জেলা পরিষদের অধীনে ছিল রাজশাহী ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড সার্ভে ইনস্টিটিউট। কয়েক বছর আগে প্রতিষ্ঠানটি অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এখন এই ফাঁকা স্থানটিতে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, কয়েকদিন আগে কিছু লোকজন বিএনপির সাইনবোর্ড টাঙিয়ে গেছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভবনের দোতলায় সংস্কার কাজ চলছে। ভবনে যাতায়াতে রাস্তা করতে সামনের টিনের বেড়া খুলে ফেলা হয়েছে। কয়েকজন শ্রমিক রাস্তার কাজ করছেন। আশপাশে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী অবস্থান করছেন।

রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. এবিএম শরিফ উদ্দীন বলেন, ‘সিটি সেন্টার নির্মাণের সময় পেছনের দোতলা ভবনটি করা হলেও জায়গাটি আসলে জেলা পরিষদের। ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান এনা প্রোপার্টিজ তাদের কর্মচারী ও বৈদ্যুতিক সামগ্রী রাখার জন্য তৎকালীন মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের সহায়তায় ভবনটি নির্মাণ করে। ওই ভবনের জায়গা যেহেতু সিটি করপোরেশনের নয়, তাই ভবনটিতে সিটি করপোরেশনের কোনো অংশও নেই।’

তবে অভিযোগ রয়েছে এনা প্রোপার্টিজের নির্মাণ করা ভবনটির স্থান জেলা পরিষদের। সরকারি জায়গায় থাকা অবৈধ ভবনে ভাড়া নিয়ে দলীয় কার্যালয় করার প্রসঙ্গে রাজশাহী মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব মামুনুর রশিদ বলেন, ‘এনা প্রোপার্টিজ জায়গা দখল করে ভবন নির্মাণ করেছে কি না বলতে পারব না। আমরা তাদের কাছ থেকে ভাড়া নিচ্ছি। ১ ডিসেম্বর এ ব্যাপারে চুক্তি হবে। তখন ভাড়ার পরিমাণ নির্ধারিত হবে।’

তিনি বলেন, ‘বসবাসের উপযোগী করতে এনা প্রোপার্টিজ নিজেরাই ভবনটির সাজসজ্জার কাজ করছে। আমরা অন্য জায়গায় অফিস করতে পারলে এ ভবনটি ছেড়ে দেব। আর এনা প্রোপার্টিজ যদি তাদের নিজের প্রয়োজনে ভবনটি আমাদের ছাড়তে বলে তাহলে আমরাও ছেড়ে দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি রাখব।’

এনা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ব্যবস্থাপনা পরিচালক আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি এনামুল হক সম্প্রতি গ্রেপ্তার হয়ে বর্তমানে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। তাই জেলা পরিষদের জায়গা দখল করে ভবন নির্মাণের বিষয়ে তার সঙ্গে কথা বলা যায়নি।

এনা গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান এনা প্রোপার্টিজের রাজশাহী আঞ্চলিক পরিচালক সারওয়ার জাহান। বক্তব্যের জন্য তার সঙ্গেও মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু তিনি ফোন রিসিভ না করায় বক্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি।

রাজশাহী জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মু. রেজা হাসান জানান, তিনি রাজশাহীতে যোগ দেওয়ার আগেই ওই ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছে। ভবনের পুরোটিই, নাকি আংশিক জেলা পরিষদের জায়গা সেটিও তিনি নিশ্চিত নন। দ্রুতই তিনি সার্ভেয়ার পাঠাবেন। প্রয়োজনে তিনি নিজে যাবেন। এরপর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

জেপি/নি-২০/এমএইচ