শরিফুল গনি উসমানি, গবি:

সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে (গবি) আন্ত:বিভাগ ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে তিনটি বিভাগের মধ্যে অন্তত দুই দফায় মারামারির ঘটনা ঘটেছে। আহত হয়েছেন প্রায় ৩০ জনের বেশি শিক্ষার্থী। এ ঘটনায় অনির্দিষ্টকালের জন্য ফুটবল টুর্নামেন্ট স্থগিত করেছে গবি প্রশাসন।

বুধবার দুপুরে প্রথমে আইন ও বায়োকেমিস্ট্রি এন্ড মলিকিউলার বায়োলজি (বিএমবি) এবং পরে বিকেলে আইন এবং রাজনীতি ও প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে দফায় দফায় মারামারির ঘটনা ঘটেছে।

জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে আইন বনাম বিএমবি বিভাগের মধ্যকার ফুটবল খেলা চলাকালীন খেলা শেষের ১০ মিনিট আগে ২ খেলোয়াড় পড়ে যাওয়ার ঘটনায় মারামারির সূত্রপাত। এ ঘটনায় বিএমবি বিভাগের এক খেলোয়াড়কে মাথায় রড় দিয়ে আঘাত করে এবং আরও দুইজন শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়। আহতদের গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নেওয়া হয়। পরবর্তীতে ক্রীড়া কমিটি উক্ত ম্যাচটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করেন।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী বিএমবি বিভাগের এক শিক্ষার্থী জানান, ‘খেলার নির্ধারিত সময়ের ৪ মিনিট বাকী থাকা অবস্থায় মাঠের উত্তর পাশের গোলবারে আইন বিভাগের খেলোয়াড়রা আক্রমণ করে, আক্রমণ ঠেকাতে বিএমবি বিভাগের একজন খেলোয়াড় এগিয়ে আসেন এবং বল নিয়ে গোল লাইনের বাহিরে চলে যান, বলটি তখন আউট হয়ে যায়, আইন বিভাগ কর্নার কিক পায়। গোল লাইনের বাহিরে চলে যাওয়ার পরে আইন বিভাগের শিক্ষার্থী স্লিপ করে তার গায়ের ওপর পরে যান। সে সময় সাধারণ ভাবেই ওই দুজন খেলোয়াড় তাদের মধ্যে কথা বলতে থাকেন। কিন্তু আইন বিভাগের দর্শকরা মাঠে ঢুকে যায় এবং খেলোয়াড়দের ওপর হামলা চালানোর জন্য আক্রমণ করলেই মাঠের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়ে যায়।

তিনি আরও জানান, হাতাহাতির এক পর্যায়ে আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা বিএমবি বিভাগের এক খেলোয়াড়কে (মুয়াজ) রড দিয়ে আঘাত করে মাথা ফাটিয়ে ফেলেন এবং মেয়েদের গায়েও হাত তুলেন৷ এরপর প্রায় ২ ঘন্টা বাকবিতণ্ডা চলতে থাকে। বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে মাঠে কর্তব্যরত রেফারি, ক্রীড়া কমিটির সভাপতি ও সংশ্লিষ্টরা খেলাটি স্থগিত করেন।’

এ ঘটনা শিথিল হওয়ার ১ ঘন্টা না পেরোতেই দ্বিতীয় দফায় রাজনীতি ও প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থীদের সাথে আইন বিভাগের শিক্ষার্থীদের মারামারির ঘটনা ঘটে।

জানা যায়, প্রথম ঘটনার পর বিএমবি বিভাগের খেলোয়াড়রা মাঠ ত্যাগ করলেও আইন বিভাগের খেলোয়াড়রা মাঠেই অবস্থান নেয়। পরবর্তী ম্যাচ রাজনীতি ও প্রশাসন বিভাগের সাথে মেডিকেল ফিজিক্স এন্ড বায়োমেডিকেল ইন্জিনিয়ারিং বিভাগের খেলা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। খেলোয়াড়রা মাঠে এসে মাঠ ছেড়ে দিতে বললে আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা মাঠ ছাড়তে অস্বীকৃতি জানায়। পরে তারা মাঠের পাশে অবস্থান নেয়। আইনের খেলোয়াড়রা মাঠে বল নিয়ে খেলার সময় পাশে থাকা রাজনীতির খেলোয়াড়দের গায়ে কাঁদা-পানি আসলে তারা ধীরে খেলতে বলে। এসময় বাকবিতণ্ডার জের ধরে মারামারির ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী রাজনীতি ও প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী রিদয় বলেন, ‘বিএমবির খেলোয়াড়রা মাঠ ত্যাগের পরও আইন বিভাগের খেলোয়াড়রা মাঠে ফুটবল খেলছিলো। রাজনীতি ও প্রশাসন বিভাগের কয়েকজন শিক্ষার্থী গোলবারের পাশে বসে ছিল। বল থেকে গায়ে পানি ছিটে আসলে আইনের খেলোয়াড়দের ধীরে খেলতে বলা হয়। কিন্তু তারা তা মানতে অস্বীকৃতি জানায় এবং তর্ক শুরু করে। তর্কের এক পর্যায়ে আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা তাদেরকে মারধর শুরু করে।’

দ্বিতীয় দফায় মারামারির ঘটনায় দুই বিভাগের অন্তত ৩০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। আহত শিক্ষার্থীদের গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নেওয়া হয়েছে।

হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা: সোহাগ রানা বলেন, ‘এখন পর্যন্ত ২৫/৩০ জনের মত চিকিৎসা নিয়েছে। এর মধ্যে দুইজনের ফ্র্যাকচার ধরা পড়েছে। এক জনের মাথায় সেলাই লেগেছে। বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো: আবুল হোসেন বলেন, ‘আজকের ঘটনা অনাকাঙ্ক্ষিত। খেলার মাঝে খেলোয়াড়দের উপর হামলার বিচার হবে। আমরা আগামীকাল এই বিষয় নিয়ে বসবো। দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি হবে। যারা হাসপাতালে ভর্তি আছে এবং চিকিৎসা নিয়েছে সবার সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করা হবে এবং বিশ্ববিদ্যালয় সব খরচ বহন করবে।’

জেপি/নি-১২/এমএইচ