প্রতিনিধি, চিলমারী (কুড়িগ্রাম):
কুড়িগ্রামের চিলমারীতে জেলে সম্প্রদায়ের এক পরিবারের নিকট থেকে ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবিসহ প্রাণনাশের হুমকি প্রদানের অভিযোগ উঠেছে একই এলাকার কয়েকজনের বিরুদ্ধে। এঘটনায় ভুক্তভোগী রাম চন্দ্র দাস বাদী হয়ে চিলমারী মডেল থানায় মামলা দায়ের করেছেন। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার পুটিমারী কাজল ডাঙ্গা এলাকায়।
জানা গেছে,উপজেলার পুটিমারী কাজলডাঙ্গা এলাকার জেলে সম্প্রদায়ের উপর দীর্ঘদিন ধরে চাঁদা দাবি,বিনা মূল্যে মাছ নেয়াসহ বিভিন্নভাবে নির্যাতন করে আসছে একই এলাকার কতিপয় যুবক। বর্তমানে জেলে সম্প্রদায়ের রামচন্দ্র দাসের নিকট ২ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবিসহ প্রাণনাশের হুমকি দেয় তারা। নিরুপায় হয়ে ভুক্তভোগী রাম চন্দ্র দাস বাদী হয়ে গত ৫ সেপ্টেম্বর তারিখে মিলন মিয়া(৪০), নয়ন মিয়া(৩৭), মাসুদ মিয়া(৩০) ও সুমন মিয়া(৩৫) এছাড়াও অজ্ঞাত আরও ৪-৫ জনকে আসামি করে চিলমারী থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। সেই সাথে উপজেলা নির্বাহী অফিসার,জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ বিভিন্ন জায়গায় অভিযোগ প্রদান করেন তিনি।
ভুক্তভোগী রাম চন্দ্র দাস এজাহারে বলেছেন, তিনি একজন জেলে সম্প্রদায়ের লোক। তিনিসহ তার পরিবারের লোকজন পূর্ব পুরুষ হতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। তাদের অন্য কোনো কর্ম নাই,একমাত্র আয়ের উৎস হলো মাছ ধরে বিক্রয় করা।
অভিযুক্ত আসামিদের বাড়ির সাথে তাদের বাড়ি হওয়ায় এবং মাছ ধরাসহ ঘাটে মাছ বিক্রয় করার কারণে তারা প্রায় তার নিকট ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করত। বিবাদীদের ওই চাঁদার টাকা দিতে অধিকার করায় তিনিসহ তার পরিবারের সদস্যদের মারপিট করাসহ খুন জখম করবে এবং ঘরবাড়ি উচ্ছেদ করার হুমকি দেয়। এছাড়াও মাছ ধরা নৌকা, জালসহ নদীতে ভাসিয়ে দিবে ও বিভিন্ন মাছ ধরা সরঞ্জাম চুরি করার হুমকি প্রদান করত। তিনি আরো উল্লেখ করেন, হুমকির কারণে ইতিপূর্বে বিভিন্ন তারিখ ও সময়ে নগদ টাকাসহ সাপ্তাহিক ভিত্তিতে মাছ দেওয়া হতো। বর্তমানে তারা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠে এবং সর্বশেষ ৩ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে দেশীয় মারাত্মক অস্ত্র নিয়ে দলবদ্ধ হয়ে বাড়িতে এসে আবারও ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে।
ওই সময় আমি ও আমার স্ত্রী চম্পা রানী প্রতিবাদ করতে গেলে এলোপাতাড়িভাবে মারপিট করে শরীরের বিভিন্ন স্থানে ফুলা ছিলা জখম করে ও আমার স্ত্রীর পড়নের কাপড় টানা হেচরা করিয়া লজ্জাশ্লীলতহানী ঘটায়।
সোমবার সরেজমিনে গেলে ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়। এসময় জেলে সম্প্রদায়কে জমিতে আশ্রয় দাতা মৃত তৈয়ব আলীর ছেলে রাজু মিয়া(৪৬)জানান,অভিযুক্ত ৪জন জেলে সম্প্রদায়ের উপর এত বেশী নির্যাতন করে যা ভাষায় বর্ননাযোগ্য নয়।
ভুক্তভোগী হরিশ চন্দ্র দাস(৬৭) কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান,আমরা এখানে ৩২ঘর জেলে রয়েছি। আমাদের কোন নিরাপত্তা নেই।তাদের অত্যাচারে আমাদের স্ত্রী-সন্তান বাড়ী থেকে বের হতে পারে না। আমরা নদীতে মাছ ধরতে গেলেও তাদের বাধার সম্মুখীন হই। কোথায় গেলে আমরা নিরাপদ থাকবো? এ প্রতিনিধির সামনে এমন প্রশ্ন করেন তিনি।
কুড়িগ্রাম জেলা কেন্দ্রীয় মৎস্য জীবী সমবায় সমিতি লি. এর সভাপতি শ্রী দিপক কুমার সরকার জানান, কুড়িগ্রাম জেলাধীন চিলমারী উপজেলার পুটিমারী কাজলডাঙ্গা গ্রামের নিরীহ মৎস্যজীবীরা কতিপয় সন্ত্রাসীর নির্যাতনের শিকার হয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে,এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে প্রশাসনিক মহলে জোড় দাবি জানাচ্ছি।
অভিযুক্ত মিলন মিয়ার সাথে মুঠো ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি। অপর অভিযুক্ত নয়ন মিয়া জানান, আমি এসব ঘটনায় জড়িত ছিলাম না, আমাকের ফাঁসানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে চিলমারী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ প্রাণ কৃষ্ণ দেবনাথ জানান, এ বিষয়ে থানায় একটি চাঁদাবাজির মামলা হয়েছে। আসামি ধরার চেষ্টা চলছে।
জেপি/নি-৯/প